সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫

Muharram celebrations | ঘোড়া প্রাণ পায় মালাকার পরিবারে, সম্প্রীতির ছোঁয়া মহরমের আয়োজনে

শেষ আপডেট:

হরিশ্চন্দ্রপুর: রবিবার দশমী। মহরমের ক্ষেত্রে এই দশমী খুব উল্লেখযোগ্য তিথি ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য। সেদিন হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় মহরমের স্মৃতিতে তৈরি বিভিন্ন থানে এবং তাজিয়ার সামনে শোলার তৈরি ঘোড়া মানত করেন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের বধূরা। এটা একটা প্রাচীন পরম্পরা। স্থানীয় জাহেদা বিবির কথায়, ‘মহরমের সময় আমরা যুগের পর যুগ ধরে এলাকায় তৈরি করা তাজিয়ার সামনে এই ঘোড়া মানত করে থাকি। অনেক সময় বাড়ির বাচ্চাদের নামেও এই ঘোড়া মানত করা হয়। যাতে তারা সুস্থসবল থাকে। তবে এই মানতের প্রতীক হিসাবে প্রকৃত ঘোড়া দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় এই শোলার ঘোড়া আমরা দিয়ে থাকি।’

আর এই শোলার ঘোড়া দশকের পর দশক ধরে বংশানুক্রমিকভাবে তৈরি করে আসছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার হাইস্কুলপাড়ার মালাকার পরিবার। দেশজুড়ে যখন বিভিন্ন কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণে আঘাত নেমে আসছে, সেখানে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার মালাকার পরিবারের সদস্যরা আজও এইভাবে সম্প্রীতির অক্ষুণ্ণ নিদর্শন বজায় রাখছেন। তৈরির খরচে না পোষালেও শুধুমাত্র প্রতিবেশী মুসলিম ভাইদের ধর্ম পালনের আবেগকে অক্ষুণ্ণ রাখতে মহরমের সময় এই ঘোড়া তৈরি করেন তাঁরা। পরিস্থিতির সুযোগ না নিয়েই খুব কম দামেই সেইসব ঘোড়া বিক্রি করে এলাকার মালাকার পরিবার।

মালাকার পরিবারের প্রবীণ সদস্য বলদেব মালাকার বলেন, ‘এটা মহরমের সময় আমরা বংশপরম্পরায় তৈরি করি। যেমন হিন্দুদের পুজোতে সোলার তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রয়োজন পড়ে, তেমনি মহরমের সময় এই ঘোড়ার একটা চাহিদা থাকে। যদিও এগুলো বানিয়ে বিক্রি করে খুব যে লাভ হয় তা নয়। কিন্তু একটি ধর্মীয় প্রথাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য আমাদের এই উদ্যোগ।’

আরেক শিল্পী গৌরব মালাকার জানান, এলাকায় এগুলো তাঁরা না বানালে আর কেউ বানানোর লোক নেই। বাইরে থেকে বানিয়ে আনা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। আর এলাকায় শোলার কাজ জানে মালাকার পরিবারই। তবে তারা এখনও এই শিল্পটাকে ধরে রাখলেও পরবর্তী প্রজন্মের আগ্রহ না থাকায় তারা এই কাজে আসবে কি না জানা নেই। প্রবীণ শিক্ষক মনজুর আলম জানান, এটা অনেকদিনের সংস্কার। মহরমের সময় তাজিয়া বা থানে ঘোড়া মানত করা। এখনও এই প্রথা চলে আসছে।

হাইস্কুলপাড়ার বাসিন্দা রূপালি বিবি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হিন্দু ভাইদের তৈরি জিনিসপত্র যেমন আমরা ব্যবহার করি, তেমনি ওঁদের অনুষ্ঠানেও আমরা আনন্দের সঙ্গে যোগদান করি। আমাদের এখানে আমরা সবসময় সচেষ্ট থাকি মহরম বা দুর্গাপুজো কোনওটাতেই যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যাঘাত না ঘটে।’

Sandip Sarkar
Sandip Sarkarhttps://uttarbangasambad.com/
Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

Malda Fazli mangoes | বিদেশের বাজারে বাড়ছে চাহিদা, লন্ডনে পাড়ি দিচ্ছে মালদার ফজলি আম

হরষিত সিংহ, মালদা: বিদেশের বাজারে চাহিদা বাড়ছে মালদার ‘ফজলি’...

Kushmandi | ছাত্রী সংখ্যা ৩৩, কুশমণ্ডি গার্লস বন্ধের আশঙ্কা

সৌরভ রায়, কুশমণ্ডি: স্কুলে স্থায়ী শিক্ষিকা মাত্র এক। ছাত্রী...

Manikchak | ‘আব্বু কি আর বাড়ি আসবে না’, প্রশ্ন মৃত কালামের চার বছরের ছোট্ট ছেলের  

আজাদ, মানিকচক: আব্বু কি আর বাড়ি আসবে না? সাংবাদিককে...

Samsi | একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় দলবদল, তৃণমূলে যোগ দিলেন ২ কংগ্রেস নেতা

সামসী: একুশে জুলাইয়ের আগেই তৃণমূলে যোগ দিলেন কংগ্রেসের দুই...