মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

Multiple Sclerosis | মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস: অদৃশ্য রোগ, দৃশ্যমান লড়াই  

শেষ আপডেট:

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) (Multiple Sclerosis) এমন একটি স্নায়বিক রোগ, যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু যার প্রভাব আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর, মন এবং জীবনধারার প্রতিটি কোণে পড়ে। লিখেছেন নেওটিয়া গেটওয়েল মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ তন্ময় পাল

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস একটি অটোইমিউন রোগ। রোগীর নিজের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুল করে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের স্নায়ুরক্ষাকারী মাইলিন আবরণের ক্ষতি করে। এতে স্নায়ুর সিগন্যাল পাঠানো ব্যাহত হয়, ফলে দেখা দেয় নানারকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।

এই রোগ সাধারণত ২০-৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগে পুরুষদের তুলনায় নারীরা প্রায় দ্বিগুণ বেশি আক্রান্ত হন। একজন তরুণ, কর্মক্ষম, স্বপ্নময় মানুষ কীভাবে হঠাৎ করে এই রোগে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েন তা দেখা সত্যিই হৃদয়বিদারক।

কীভাবে ধরা পড়ে

প্রথমদিকে উপসর্গগুলো এতটাই অস্পষ্ট থাকে যে, রোগী ও তার পরিবার অনেক সময় বুঝতেও পারে না এটা কতটা গুরুতর হতে পারে। আমার ৩২ বছর বয়সি এক রোগী একদিন আমাকে বলেন, ‘ডাক্তারবাবু আমি ঠিক করে হাঁটতে পারি না। অথচ সবাই ভাবে আমি অলস।’

উপসর্গ

হাত-পা অবশ হওয়া বা ঝিনঝিনে অনুভূতি, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা বা দ্বিগুণ দেখা, চলাফেরায় ভারসাম্যহীনতা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, প্রস্রাবে অসুবিধা, কথা বলতে বা গিলতে সমস্যা, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, হতাশা বা মানসিক অবসাদ।

কেন হয়

আমরা এখনও জানি না কেন একেকজন এই রোগে আক্রান্ত হন। তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জিনগত কারণ, কিছু ভাইরাল সংক্রমণ (বিশেষ করে Epstein-Barr virus), ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি, ধূমপান এবং কিছু পরিবেশগত উপাদান এমএসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে এই রোগ সংক্রামক নয়, এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায় না।

চিকিৎসা

এখনও এমএসের স্থায়ী কোনও চিকিৎসা নেই। কিন্তু আশার কথা, আধুনিক চিকিৎসা উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রোগের গতি অনেকটা ধীর করতে পারে।

প্রচলিত চিকিৎসা

  • ডিজিজ-মডিফাইং থেরাপিস (ডিএমটিএস), যা রোগের অগ্রগতি কমায়
  • স্টেরয়েডস, রিল্যাপস বা উপসর্গের পুনরাবৃত্তির সময় ব্যবহার করা হয়
  • ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন দৈনন্দিন জীবনের গতি ধরে রাখতে সাহায্য করে
  • মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন, কারণ মানসিক চাপ এমএসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক
  • এছাড়া রোগীর পরিবারের বোঝাপড়া ও সহানুভূতি রোগীর সুস্থতার পথে অনেক বড় ভূমিকা রাখে

এমএস একটি অদৃশ্য রোগ, মানে বাহ্যিকভাবে আপনি হয়তো কিছুই বুঝবেন না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে সেই ব্যক্তি প্রতিদিন সংগ্রাম করছেন। রোগটি একজন মানুষের সত্ত্বা, সম্পর্ক, কর্মক্ষমতা ও আত্মসম্মানের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তাই সহানুভূতির সঙ্গে রোগীদের পাশে থাকুন। রোগ সম্পর্কে জানুন, অন্যদের জানান। ভুল ধারণা ও কুসংস্কার দূর করুন।

Shahini Bhadra
Shahini Bhadrahttps://uttarbangasambad.com/
Shahini Bhadra is working as Trainee Sub Editor. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Online. Shahini is involved in Copy Editing, Uploading in website.

Share post:

Popular

More like this
Related

Mango | ডায়াবিটিকদের পাতেও থাকুক আম  

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: এই মরশুমে আম (Mango) খাওয়ার...

Roasted Corn | সেঁকা ভুট্টা খেতে ভালোবাসেন? এর উপকারিতাগুলি জেনে নিন…  

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: সেঁকা ভুট্টা খেতে ভালোবাসেন অনেকেই...

Hyperthyroidism | হাইপারথাইরয়েডিজম

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism) একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য...

Knee Replacement | হাঁটু প্রতিস্থাপনে উপকার কতটা

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: হাঁটুব্যথা এমন একটি সমস্যা যা...