প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রবিবার নতুন সংসদ ভবনের দ্বারোদঘাটন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগেই স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকে উপেক্ষিত রেখে অনুষ্ঠানের রাশ নিজের হাতে রাখার অভিযোগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, বামফ্রন্ট সহ ২০টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। দেশব্যাপী এই অনাস্থার আবহ থেকে দৃষ্টি ফেরাতে এবার নয়া চাল প্রধানমন্ত্রীর। শুক্রবার তিনি সূচনা করলেন, ‘মাই পার্লামেন্ট মাই প্রাইড’ ক্যাম্পেন। এদিন নবনির্মিত পার্লামেন্টের একটি ভিডিও টুইটারে পোস্ট করে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর আর্জি, ‘নতুন সংসদ ভবন দেশের গর্বের সম্পদ। এই ভিডিওতে পার্লামেন্টের আভিজাত্য ও গৌরবময় অংশ ধরা রয়েছে৷ সবার কাছে অনুরোধ নতুন সংসদ ভবনের এই ভিডিও পোস্ট করুন, নিজের ভাষায় প্রকাশ করুন নয়া সংসদ ভবন সম্পর্কে আপনার অভিব্যক্তি।’ এ ক্ষেত্রে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘হ্যাশট্যাগ’ ‘মাই পার্লামেন্ট, মাই প্রাইড’ অর্থাৎ কিনা ‘আমার সংসদ, আমার গৌরব’ উল্লেখ করতে ভুলবেন না। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ সামাজিক মাধ্যমে নতুন সংসদ ভবনের এই ভিডিও শেয়ার করতে শুরু করেছেন। বহু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাংসদেরাও রয়েছেন এই তালিকায়।
একদিকে খোদ প্রধানমন্ত্রী যখন ঝাঁ চকচকে নয়া সংসদ ভবনের ভিডিও শেয়ার করে ‘মাই পার্লামেন্ট মাই প্রাইড’ প্রচার শুরু করেছেন, ঠিক তখনই অন্যদিকে কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করতে থেমে থাকেননি বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ ও চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় ষাটের দশকে পাঞ্চেত বাঁধ উদ্বোধনের ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বাঁধ নির্মাণের জনৈক আদিবাসী মহিলা শ্রমিককে দিয়ে বাঁধ উদ্বোধন করেছিলেন। বর্তমানে দেশের রাষ্ট্রপতি নিজেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। অথচ তাঁকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই নবনির্মিত সংসদ ভবন উদ্বোধন করতে চলেছেন যা দেশের ইতিহাসের ক্ষেত্রে চরম পরিহাসের বিষয়।
এদিকে নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধন নিয়ে সাজো সাজো রব পড়েছে সংসদ চত্ত্বরে। সংসদ সূত্রের দাবি, রবিবারের অনুষ্ঠানের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। ওইদিন সকাল ৭.৩০ থেকে ৮.৩০ হবে যজ্ঞ ও পুজো। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লা, রাজ্যসভা ডেপুটি চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। সকাল ৮.৩০ থেকে ৯ টার মধ্যে লোকসভার ভেতরে বৈদিক রীতি-রেওয়াজ অনুযায়ী ভবনের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর জন্য তামিলনাড়ু থেকে মোট থেকে ২০ জন সাধু উপস্থিত থাকবেন। ৯ টা থেকে ৯.৩০-এর মধ্যে প্রার্থনা সভা আয়োজিত করা হয়েছে। এর মধ্যে শংকরাচার্য সহ একাধিক বড় বিদ্বান পন্ডিত এবং সাধুসন্ত উপস্থিত থাকবেন। দ্বিতীয় চরণে দুপুর ১২ টা থেকে জাতীয় গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এর মধ্যে একটি শর্ট ফিল্মের স্ক্রিনিং করা হবে। তারপর ডেপুটি চেয়ারম্যান রাজ্যসভা, হরিবংশ সিং উপরাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতির বার্তা পাঠ করবেন। বক্তব্য রাখবেন লোকসভা অধ্যক্ষ ওম বিড়লাও। এরপরে নতুন সংসদ ভবন নিয়ে স্মারক মুদ্রা এবং ডাকটিকিট রিলিজ করা হবে। একদম শেষে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সম্বোধন অনুষ্ঠান রয়েছে। দুপুর ২.৩০-র সময় কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। এই উপলক্ষে নতুন সংসদ ভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের এবং গুণীজনদের। এই অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের বক্তব্যের জন্য সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু কংগ্রেস অনুষ্ঠান বয়কট করলেও বিরোধীদের জন্য রাখা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়।