সামসীঃ অসমে রহস্যজনকভাবে (Mysterious death) খুন বাংলার এক ফেরিওয়ালা। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃত ফেরিওয়ালার নাম আনারুল হক(২৪)। বাড়ি মালতীপুর বিধানসভার চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঘাপাড়া গ্রামে। ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তাঁর কফিনবন্দি মরদেহ ফিরতেই কান্নার রোল নেমে আসে পরিবারে। পাশাপাশি গোটা গ্রামে শোকের আবহ।
মালতীপুর বিধানসভার চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঘাপাড়া গ্রামের বছর চব্বিশের তরতাজা যুবক আনারুল হক ফেরিওয়ালার কাজে যান গত কয়েক মাস আগে আসামের উদলগুড়ি জেলার বরগুলি গ্রামে। তিনি সারাদিন গ্রামে গ্রামে সাইকেলে করে প্লাস্টিকের হরেক মাল বিক্রি করতেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর পরিহাস সেখানে সারাদিন ফেরি করে বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু রেল লাইন পার হতে গিয়ে চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় সোমবার পড়ন্ত বেলায়। ময়নাতদন্তের পর কফিনবন্দি মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে সড়কপথে বুধবার সকাল দশটা নাগাদ নিজ গ্রামে এসে পৌঁছায়। দুপুর সাড়ে ১২ টা নাগাদ নিজ গ্রামে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
মৃত আনারুলের শ্যালক সাজ্জাদ আলি জানান, “রেলের জিআরপি বাড়িতে ফোন করে প্রথম খবর দেন। জিআরপি আরও জানায় ট্রেনের ধাক্কায় সে মারা গেছে।” তার সাফ বক্তব্য, “সে ট্রেনে কেটে মারা যায়নি। ট্রেনে কেটে মারা পড়লে শরীর লন্ডভন্ড হয়ে যেত। কিন্তু মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছাড়া শরীরের কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি জামাইবাবুকে খুন করা হয়েছে। চাঁচল থানার পুলিশ এদিন এসেছিলেন। আমরা মৌখিকভাবে সব বলেছি।” পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করবেন বলেও জানান। যাতে পুলিশ খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেন।
মৃত ফেরিওয়ালা আনারুল হক গরীব পরিবারের ছেলে। বাবা ইয়াসিন আলি পেশায় দিনমজুর। মা ফিরোজা বিবি সাধারণ গৃহবধূ। ওরা দুই ভাই, দুই বোন। পরিবারে নিত্য অভাব। বাবার কোনও জমি জায়গা নেই। বাবার তিনশতক ভিটে বাড়িই সম্বল। আনারুল পরিবারের সবার বড়। তাই পরিবারের দায় দায়িত্বটা তাঁর কাঁধেই ছিল। আর এলাকায় তেমন কাজও ছিলনা। এদিকে একশো দিনের কাজও বন্ধ। তাই পরিবারের অভাব দুর করতে আসামে গ্রামে গ্রামে সাইকেলে করে প্লাস্টিকের মাল বিক্রি করতেন। এতেই যা রোজগার হত তাতেই দিব্যি সংসার চলত।
আনারুল হক বিবাহিত। তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। স্বামীর মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আকতারা। শোকাহত গলায় আকতারা জানায়, গত শুক্রবার রাতে শেষ কথা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। ইদে তাঁর বাড়ি আসার কথা ছিল। সোমবার সন্ধ্যার পরে প্রথম স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে একেবারে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন তিনি। অকালে স্বামীকে হারিয়ে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না আকতারা। সংসার কিভাবে চলবে তা ভেবে একেবারে দিশেহারা সে। আকতারা জানায়, তাঁর স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনিও তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছবি সরকার জানান, তারও অনুমান আনারুলকে খুন করে মারা হয়েছে। মরদেহ আসার পরেই তিনি আনারুলের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তার শোকাহত পরিবারকে সমবেদনার জানানোর পাশাপাশি সব রকম সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বলেন, এই গ্রামের অনেক যুবক ফেরিওয়ালার কাজে আসামে রয়েছেন। তবে ঠিক কতজন রয়েছে তার সঠিকভাবে জানাতে