চাকুলিয়া: হাত বান্ধিবি, পা বান্ধিবি, মন বান্ধিবি ক্যামনে…! আজও অনেক পরিবার বাল্যবয়সে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়। কোনও ক্ষেত্রে জোর করে, আবার কোনও ক্ষেত্রে আর্থিক অনটন থেকে পরিত্রাণ পেতে। এই সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝেও অনেক মেয়ে পরিবারের মুখের উপর ‘না’ বলার সাহস দেখায়। হাত-পা বেঁধে দিলেও মনটাকে যে বেঁধে রাখা যায় না, তা-ই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নাসরিন খাতুন। মাদ্রাসার ফাজিল বিভাগের পরীক্ষায় ৬০০-র মধ্যে ৫৫০ নম্বর পেয়ে রাজ্যে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে সকলের মন জয় করে নিয়েছে সে।
অভাবী পরিবার। তাই ‘ভালো’ পাত্রের খোঁজ পেয়ে একসময় মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা। কিন্তু বাবার এই জেদের কাছে হার মানতে চায়নি নাসরিন। বাড়ির কাছাকাছি কোনও উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান নেই। তাই ভর্তি হয়েছিল ১২ কিমি দূরে চাকুলিয়ার শিরশী মাদ্রাসায়। অদম্য জেদ ও ইচ্ছেশক্তির উপর ভর করে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রতিদিন লড়াই করেছে সে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এই মেয়েটার সাফল্যে এখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা চাকুলিয়া।
তথ্য বলছে, চাকুলিয়া থানার সাহাপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা শিক্ষায় সবচেয়ে পিছিয়ে। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নাসরিন। গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ভিনরাজ্যের শ্রমিক। তার বাবা মহবুল হক দিনমজুর। জমিজায়গা বলতে কিছুই নেই। একচিলতে জমির উপর বসতভিটে। বাবা, মা, ভাইবোনদের সঙ্গে এই বাড়িতেই থাকে সে।
নাসরিন যখন নবম শ্রেণিতে পড়ছে, তখন পরিবারের লোকজন তার বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু পরিবারের মতের বিরুদ্ধে সে রুখে দাঁড়ায়। বিয়ে না করার জন্য সে তিনদিন ধরে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। অবশেষে তার জেদের কাছে হার মানে পরিবার। মা আয়েশা খাতুন বলছেন, ‘আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।’ তাই মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। ‘আমাদের মতো অসহায় পরিবারগুলিতে এটাই মনে করা হয়। আমরাও সেটা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু আমাদের ঘুম ভাঙল মেয়ের প্রতিবাদে’, বলছেন আয়েশা।
একই কথা বলছেন তার বাবা মহবুল। বলছেন, ‘পড়াশোনার গুরুত্ব আমরা কোনওদিন বুঝতে পারিনি। পাড়াপ্রতিবেশীর চাপে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, সেই সিদ্ধান্ত আমাদের ভুল ছিল।’ তিনি আরও বলছেন, ‘এতদিন যাঁরা মেয়ের বিয়ের জন্য বারবার তাগাদা দিতেন, তাঁদের গলায় এখন উলটো সুর। তাঁরাও এখন মেয়ের প্রশংসা করছেন।’
পরিবারের আর্থিক অনটন নাসরিনের মনটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিত। ‘বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে টাকাপয়সা চাইতে পারতাম না। তবে আমার প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসার কোনও কমতি ছিল না’, বলছে এই মেধাবী ছাত্রী।
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়তে চায় নাসরিন। ভবিষ্যতে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন রয়েছে তার। শিরশী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মহম্মদ আবু তাহের বলছেন, ‘নাসরিন বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রমাণ করেছে যে ওর সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। আমরা চাই সে আরও পড়াশোনা করে এগিয়ে যাক। আমরা সকলেই ওর পাশে রয়েছি।’
রায়গঞ্জ: সেগুন কাঠ পাচারের (Wood Smuggling) অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করল বন দপ্তর। অসমের (Assam) শিলচর…
অনুপ সাহা, ওদলাবাড়ি: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পরিচালিত ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট (NET Exam 2024) পরীক্ষায় সারা…
হেমতাবাদঃ আগ্নেয়াস্ত্র সহ দুই তৃণমূলকর্মীকে গ্রেপ্তার করল রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে…
বালিয়া (উত্তরপ্রদেশ): শিক্ষকের চড়ে আংশিক শ্রবণশক্তি হারাল ছাত্র। এমনই অভিযোগ উঠেছে উত্তরপ্রদেশের উভাওন থানার পিপরাউলি…
শিলিগুড়ি: ‘সফল চন্দ্রযান মিশনের পর গোটা বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।’ দিল্লি পাবলিক স্কুল ফুলবাড়িতে…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা বাইকের। ঘটনায় মৃত্যু হল ৩ তরুণের। শনিবার…
This website uses cookies.