সানি সরকার, শিলিগুড়ি: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উত্তরাখণ্ডের পথ বন্ধ হতেই সিকিমে (Sikkim) নজর। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের নাথু লা (Nathu La) দিয়ে কৈলাস যাত্রা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে পাহাড়ি রাজ্যটিতে। প্রথমে ভারত-চিনের ডোকালাম সংঘাত এবং পরবর্তীতে কোভিড পরিস্থিতির জেরে বন্ধ হয়ে থাকে নাথু লা দিয়ে মান সরোবর যাত্রা। সেই পথই আবার খুলতে শুরু করেছে। কিন্তু কেমন করে বরফ গলল? প্রশাসনিক সূত্রে খবর, চলতি বছর জানুয়ারিতে চিন সফরে গিয়ে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন চিনের বিদেশসচিব সান ওইডংয়ের সঙ্গে। ওই বৈঠকের পরই নতুন করে কৈলাস যাত্রার পথ উন্মুক্ত করতে সম্মত হয় বেজিং। বিদেশমন্ত্রক থেকে বার্তা পেয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে প্রেমসিং তামাংয়ের প্রশাসন।
’১৭-র ডোকালাম সংঘাত, ’২০-র গালওয়ান সংঘর্ষ এবং কোভিড, ত্র্যহস্পর্শে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সিকিম দিয়ে কৈলাস মান সরোবর যাত্রা। টানা কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর বিদেশসচিবের তৎপরতায় নাথু লা-র পুরোনো পথ নতুন করে খুলতে চলেছে। মূলত কৈলাস যাত্রা জুন মাসের শেষে শুরু হয়ে চলে অগাস্ট পর্যন্ত। কেননা, এই সময় পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও, শীত-বসন্তের বরফ গলে জল হয়ে যায়। ফলে ট্রেক রুট কষ্টকর হলেও তেমন চরম সমস্যায় পড়তে হয় না পুণ্যার্থীদের। সড়ক পরিকাঠামো অনেকটা উন্নত থাকায় বাস যাত্রার ধকল আগের মতো নেই। নাথু লা থেকে মান সরোবরের দূরত্ব প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে লিপুলেখ লা-তে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ট্রেক করতে হয়। পাশাপাশি রয়েছে, কৈলাস পরিক্রমার ক্ষেত্রে পাহাড়ের ওপর ৫২ কিলোমিটারের ট্রেকিং। যা করতে প্রায় তিনদিন লেগে যায়। যদিও শারীরিক দক্ষতার কারণে অনেকে তা দু’দিনে সম্পন্ন করে ফেলেন। এবার দুই দফায় কৈলাস যাত্রার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি দল যাবে। প্রতিটি দলে থাকবেন ৫০ জন করে। পরবর্তীতেও ৫০ সদস্যের দল গঠন করে ১০টি দলকে অনুমতি দেওয়া হবে।
সিকিম প্রশাসন সূত্রে খবর, কৈলাস যাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে রাজধানী গ্যাংটক ও নাথু লা-তে দুটি অ্যাক্লাইমেটাইজেশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে শৌচালয় থেকে যাত্রার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগসুবিধা রাখা হচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নে একযোগে কাজ করছে রাজ্যের বন, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং পর্যটন দপ্তর। কী কী কাজ করা হয়েছে, কোন কাজ বাকি রয়েছে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট চলতি সপ্তাহে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। সিকিমের পর্যটনমন্ত্রী ছেরিং থেনডুপ ভুটিয়া বলেন, ‘কৈলাস যাত্রার পরিকাঠামো তৈরির জন্য গত মাসেই কেন্দ্রের তরফে নির্দেশ আসে। সেই মোতাবেক পরিকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।’ কৈলাস মান সরোবর যাত্রাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে পর্যটনের প্রসার হবে বলেও আত্মবিশ্বাসী তিনি।