রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: শুধু পরীক্ষা দুর্নীতি নয়, অ্যাকাডেমিক তহবিলের টাকা খরচেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে। স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তার গাড়ির মাসিক জ্বালানির খরচের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকের যাতায়াতের খরচ বাবদও এই তহবিল থেকে মোটা টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু এই তহবিলের টাকা তো কলেজের উন্নয়নে খরচ হওয়ার কথা। তাহলে কীভাবে সেই টাকা দিয়ে গাড়ির তেল এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্তার বিমানভাড়া মেটানো হল? এর কোনও জবাব দিতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সাহা এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
প্রতিটি মেডিকেল কলেজেই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের তহবিল থাকে। পাশাপাশি কনটিনজেন্সি ফান্ডও থাকে। এই ফান্ডের জন্য ট্রেজারি থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই টাকা খরচ করে সমস্ত বিল জমা দিলে আবার একই খাতে টাকা মেলে। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজেও একইভাবে প্রচুর বরাদ্দ এসেছে। কলেজ সূত্রে খবর, মূলত কলেজের এই ফান্ডগুলি থেকে অধ্যাপক এবং পড়ুয়াদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জার্নাল কেনা, প্রশিক্ষণ শিবির, সেমিনারের আয়োজন করার কথা। এর সঙ্গে কলেজের নিজস্ব প্রয়োজনে সাফসুতরো করা থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সরঞ্জামও কেনার কথা।
অভিযোগ, এই কলেজে কয়েক বছর ধরে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং কনটিনজেন্সি তহবিলের টাকা খরচ নিয়ে প্রচুর অনিয়ম হচ্ছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সাহা দায়িত্ব নিয়েছেন। সেই সময় থেকে তিনি অফিসের দোতলার অতিথিনিবাসে থাকছেন। অথচ কলেজ অধ্যক্ষের জন্য পৃথক আবাসন রয়েছে। সেখানে না থেকে অতিথিনিবাস কেন দখল করে রয়েছেন অধ্যক্ষ, সেই প্রশ্ন উঠছে। অধ্যক্ষের দাবি, ‘রীতিমতো ভাড়া দিয়েই তিনি অতিথিনিবাসে থাকেন।’ হাউস রেন্ট বাবদ অধ্যক্ষ ১২ হাজার টাকা পান। কিন্তু তাঁর দাবি, প্রতি মাসে ন’হাজার টাকা করে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের তহবিলে জমা দেন। একটা সরকারি দপ্তরে কি এই নিয়ম চলতে পারে? এই প্রশ্নের জবাব কলেজের তরফে মেলেনি। তবে জানা গিয়েছে, অধ্যক্ষ যে ন’হাজার টাকা করে জমা দিতেন সেটা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে কার্যত বেনামে নগদে রাখা থাকে।
সেই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং কনটিনজেন্সি তহবিল থেকেই স্বাস্থ্য দপ্তরের একদা উত্তরবঙ্গের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকের গাড়ির জ্বালানির খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা করে মাসে দেওয়া হয়েছে। ওই আধিকারিক নীল বাতির গাড়ি, একাধিক নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘুরতেন বটে, কিন্তু সেসবের কোনও লিখিত ছাড়পত্র ছিল না। যার জেরে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ তাঁকে চলেফিরে বেড়াতে এভাবে টাকা দিয়েছে। প্রায় দেড় বছর উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ থেকেও তাঁকে কোনও অনুমতি ছাড়াই ১০ হাজার টাকা করে মাসে দেওয়া হয়েছে। এদিন প্রতিক্রিয়া জানতে ওই স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অন্যদিকে, ২০২২ সালের মাঝমাঝি সময়ে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ডাঃ সুহৃতা পাল উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে কিছু কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছিলেন। সেই সময় তাঁর যাতায়াতের খরচ বাবদ ৩০ হাজার টাকা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের তহবিল থেকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একজন উপাচার্য কলেজ পরিদর্শনে আসবেন তার খরচ তো বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে। মেডিকেল কলেজ কেন দেবে? এরও কোনও জবাব মেলেনি।
কলেজ সূত্রে খবর, স্বাস্থ্যকর্তার মাসে মাসে গাড়ির জ্বালানির খরচ এবং উপাচার্যর যাতায়াতের খরচ বাবদ দেওয়া টাকা অন্য খাতে বিল বানিয়ে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এভাবে কি এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করা যায়, প্রশ্ন উঠছে মেডিকেলেই।