বিশ্বজিৎ প্রামাণিক,পতিরাম: সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগের ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করেছে। এই রায়ের পর প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক নিয়োগও (Primary Recruitment Case) আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে বাজারঘাটে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। হাইকোর্টে প্রাথমিকের মামলা চলাকালীন বিচারপতির সরে যাওয়া বিচার প্রক্রিয়াকে কিছুটা মন্থর করেছে। কিন্তু এই ৬০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের মানসিক আতঙ্ক এবং উৎকণ্ঠা বহুগুণ বেড়ে গেছে। সাথে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ ওই প্রাথমিক শিক্ষকদের।
রাজনৈতিক বিরোধী দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, হাটবাজার, চায়ের দোকান সর্বত্র এখন একটাই আলোচনা ২০১৭ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিল হয়ে যাবে কিনা। ওই সময় নিযুক্ত বহু শিক্ষক এখন সামাজিকভাবে কোণঠাসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা এখন স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছেন। সহকর্মী ও পরিচিতরা তঁাদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন, যেন তঁারা অপরাধী!
যেমন, ২০০৪ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, বাজারে গেলে কিংবা স্কুলের রাস্তায় সকলেরই একটা অদ্ভুত দৃষ্টি। কেউ কেউ তো জিজ্ঞেস করেই ফেলে, ‘আপনার নিয়োগ তো ‘এগারোর’ আগে তাই না?’ একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদা জানিয়েছেন, এইসব নিয়ে ভাবনার কোনও কারণ নেই। বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
তৃণমূল সরকারের আমলে প্রতিটি নিয়োগই কার্যত সন্দেহের নজরে দেখছেন আমজনতা। এসএসসির এক রায়ে শুধু প্রাথমিক শিক্ষকদের নয়, তৃণমূল আমলে নিযুক্ত সমস্ত স্তরের কর্মচারীদের মধ্যে এক চরম আশঙ্কার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এই মানসিক চাপে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ বাড়ছে। ব্যাংকগুলোও নতুন করে ২০১৭ সালের নিয়োগপ্রাপ্তদের ঋণ দিতে অনিচ্ছুক, যা আর্থিক দিক থেকেও তাঁদের বিপদে ফেলছে।
প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে। এসএসসির ‘যোগ্য-অযোগ্য’ বিতর্ক এখন প্রাথমিক স্তরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থার দ্রুত সমাধান চান শিক্ষক সমাজ। শুধু চাকরি নয়, তাদের সম্মানও আজ প্রশ্নের মুখে। অবিলম্বে আদালতের হস্তক্ষেপই পারে এই আশঙ্কার বাতাবরণ থেকে ৬০ হাজার শিক্ষককে মুক্তি দিতে।