কিছু ওয়েব সিরিজ ও সিনেমার চিত্রনাট্য, চরিত্রের সঙ্গে কত মিল আমাদের জীবনের। ‘কোটা ফ্যাক্টরি’, ‘অ্যাসপিরেন্ট’, ‘টুয়েলভথ ফেল’ রূপকথার গল্প নয়। সেখানে সফলতার সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক সমস্যা, ব্যর্থতা, বন্ধুত্ব, বাধাবিপত্তি, সেল্ফ ডাউট- সবই রয়েছে। যেখানে ফিকশনের সঙ্গে বাস্তবের মিল খোঁজে তরুণ প্রজন্ম।
ভাস্বতী মণ্ডল
কিছুদিন আগে ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজটি দেখছিলাম। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম কনটেন্ট দেখে। অবশ্য সময়ের অভাবে একবারে পুরোটা দেখা হয়নি। কখনও একটু সময় ওয়েব সিরিজ দেখে পড়তে বসেছি। আবার কখনও রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ঘুমোনোর আগে দেখেছি। একদিন হঠাৎই ভাবনায় এল, সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমা দেখার সেই আগ্রহটা এখন কেন জানি অনেকটা কমে গিয়েছে! শেষ কবে সিনেমাহলে গিয়েছি, তাও মনে পড়ে না।
বড়দের কাছে শুনেছি তাঁদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল, সিনেমাহল। আমাদের প্রজন্মের অনেকেই মুঠোফোনে বন্দি। তার কারণও অবশ্য রয়েছে। মানুষ এখন ডিজিটাল জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত। স্বাভাবিকভাবে বিনোদনের মাধ্যমগুলি বদলে গিয়েছে। একসময় পাড়ায় পাড়ায় যাত্রা হত। এরপর নাটক, থিয়েটার, সিনেমাহল, মাল্টিপ্লেক্সের ‘স্বর্ণযুগ’ পেরিয়ে এখন ট্রেন্ডে দেশি-বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম।
হলে গিয়ে সিনেমা দেখা আর মোবাইলে ওয়েব সিরিজ দেখার মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, সময়ের কথা। মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে সিনেমা দেখা মানে সব মিলিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা সময় দরকার। তখন অন্য কোনও কাজ করা সম্ভব নয়। অথচ ওয়েব সিরিজ আমরা নিজেদের সুবিধামতো দেখে নিতে পারি। একটানা বসে থাকার প্রয়োজন নেই। নির্দিষ্ট অংশ ভালো না লাগলে স্কিপ করে যেতে পারি। তাছাড়া মাল্টিপ্লেক্সে দুটো সিনেমা দেখতে গিয়ে যে টাকা খরচ হয়, সেই তুলনায় কম খরচেই ওটিটি’র সাবস্ক্রিপশন পেয়ে যাচ্ছি আমরা। ওয়েব সিরিজের আরেকটি সুবিধা হল, এগুলি ছোট ছোট এপিসোডে ভাগ করা। তাই সেটা দেখার সময় একবারে প্রচুর সময় খরচ হয় না। হলে একা গিয়ে সিনেমা দেখাটা বোরিং, সঙ্গে কাউকে নিয়ে যেতে হয়। তবে ঘর বসে মোবাইলে ওয়েব সিরিজ একাই দেখা যায় অনায়াসে।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে হলে যে সিনেমা চলবে, সেগুলিই দেখতে হবে আমাদের। সেখানে বেছে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। অন্যদিকে, মোবাইলে হাজার হাজার কনটেন্ট একসঙ্গে পেয়ে যাচ্ছি। যেটা পছন্দ, সেটাই দেখতে পারি। বিদেশি, বিশেষ করে কোরিয়ার ওয়েব সিরিজ, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। সেসব হিন্দি ভাষায় ডাব করা হচ্ছে। এধরনের কনটেন্ট কিন্তু সিনেমাহলে পাওয়া যায় না।
ওয়েব সিরিজ যে শুধু বড় বড় শহরে তৈরি হয়, তা নয়। ‘সিনেবাপ’ নামে কোচবিহারের একজন ইউটিউবার ‘ধোঁয়াবাড়ি’ ওয়েব সিরিজ বানিয়েছিল, সেটা দেখেছিলাম। আবার ‘নোংরা সুশান্ত’ নামে আরেকজন ইউটিউবার রয়েছে। সম্প্রতি সে ‘মীরাবাঈ’ নামে ওয়েব সিরিজ বানিয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের এলাকার কলাকুশলীদের কাজ দেখার সুযোগ পাচ্ছি।
তবে মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। হলে সবাই মিলে হইহুল্লোড় করে সিনেমা দেখার আনন্দটা কিন্তু মোবাইলে নেই। সিনেমাহলের বিকল্প হিসেবে আমরা ওটিটিকে বেছে নিয়েছি ঠিকই এবং সেখানে ভালো ভালো কনটেন্ট হয়তো পাচ্ছি, কিন্তু বড় স্ক্রিনে দৃশ্য উপভোগের অনুভূতিটাই আলাদা। মাঝেমধ্যেই অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান’। অর্থাৎ সিনেমাহলের দর্শক কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে টলিউড। তাই আমার মনে হয় মুঠোফোনে ওয়েব সিরিজ দেখার পাশাপাশি ভালো সিনেমা তৈরি হলে শিল্পী এবং শিল্পর পাশে দাঁড়াতে অন্তত একবার সেটা হলে গিয়েও দেখা উচিত।
(দ্বিতীয় সিমেস্টার, কোচবিহার কলেজ)