শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: পাহাড় মানে শুধু স্বাদ গন্ধের চা-ই নয়। সঙ্গে রয়েছে শীতের রসালো কমলালেবুও(Orange)। একটা সময় ভালোই হত। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে তা হারিয়ে যেতে থাকে। এবারে কমলা চাষে কালিম্পংয়ের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। হর্টিকালচার দপ্তর ও জিটিএ যৌথভাবে একাজে এগিয়ে এসেছে। ওই জেলার ৪টি ব্লক মিলিয়ে প্রচুর ম্যান্ডারিন প্রজাতির কমলা চারা বিতরণ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে মুসম্বি, পেয়ারা ও লেবুর চারাও। সব মিলিয়ে ২০০ হেক্টর জমিকে কমলা ও অন্যান্য ফল চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। উপকৃত চাষির সংখ্যা সব মিলিয়ে অন্তত দু’হাজার। কালিম্পংয়ের জেলা হর্টিকালচার আধিকারিক সঞ্জয় দত্ত (ডিএইচও) বলেন, ‘দার্জিলিংয়ের মতো কালিম্পং জেলায়ও কমলা চাষে সাফল্যের সম্ভাবনা অপার। একটা সময় এখানকার বিভিন্ন স্থানে প্রচুর কমলা হত। নানা কারণে তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। নতুন উদ্যমে ফের কমলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চাষিদের অতিরিক্ত আয়ের পথ সুগম করতে দেওয়া হচ্ছে আরও হরেক কিসিমের ফলের চারাও।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, কমলার পাশাপাশি পাহাড়ে ভালো ফলন হয় এমন ফলগুলিকে হাতিয়ার করে কালিম্পংয়ের(Kalimpong) চাষবাসে নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটাতে চাইছে হর্টিকালচার দপ্তর ও জিটিএ। চলতি আর্থিক বর্ষে জেলার কালিম্পং এক, লাভা-আলগাড়া, পেডং ও গরুবাথান- এই ৪ ব্লককে কমলা, অ্যাভোকাডো ও অন্য ফল চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গত বছরও দার্জিলিংয়ের ম্যান্ডারিন প্রজাতির কয়েক হাজার কমলার চারা ওই ৪ ব্লকে দেওয়া হয়।
উদ্যান পালন বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কমলা চাষের মানচিত্রে কালিম্পংকে নতুন করে তুলে ধরার প্রয়াসের পেছনে রয়েছে সেখানকার অনুকূল জলবায়ু। জেলার কমলা গোলা হিসেবে পরিচিত গরুবাথান ব্লকের তোদে তাংতা, ছোটা সুন্তালে, সুন্তালেবাড়ি, কালীখোলা, পেডং, অম্বিয়কের মতো বিস্তীর্ণ এলাকায় একটা সময় শীতের ওই ফলের চাষ হত। তোদে তাংতা এলাকার কমলালেবুর সঙ্গে মিরিক কিংবা কার্সিয়াংয়ের সিটংয়ের কমলার খুব একটা পার্থক্য নেই বলেও অনেকে জানাচ্ছেন। সাইট্রাস ড্রাইব্যাক নামে ভাইরাসঘটিত একপ্রকার রোগের আক্রমণে বর্তমানে সেখানে ওই চাষ কার্যত বিলুপ্তির পথে। এবারে হর্টিকালচার দপ্তরের(Horticulture Department) উদ্যোগে ও পরামর্শে নতুন করে কমলা বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন পাহাড়ি জেলাটির কয়েক হাজার বাসিন্দা।