আলিপুরদুয়ার: জন্মের সময় ওজন মাত্র ৮০০ গ্রাম ছিল। সাড়ে তিন মাস হাসপাতালে থাকার পর সেই শিশুর ওজন ১ কেজি ৯৪০ গ্রাম হল। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি এই সাফল্যের পিছনে বড় ভূমিকা এসএনসিইউ ইউনিটের রয়েছে। এসএনসিইউয়ের নার্সের প্রচেষ্টায় যে নবজাতক কন্যাটি সুস্থ হয়ে উঠেছে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে। তবে বাড়ির লোকের খোঁজ না পাওয়ায় সোমবার ওই শিশুটিকে আলিপুরদুয়ার জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সোমবার এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ পরিতোষ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘সাড়ে তিন মাস আগে হাসপাতালে ওই বাচ্চাটির জন্ম হয়। বাচ্চাটির মায়ের ছুটি হওয়ার পর সে আর বাচ্চার খোঁজ করেনি। বাড়ির লোকের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউ আসেনি। নার্সরাই বাচ্চাটিকে সুস্থ করে তুলেছে।’
আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল সূত্রে খবর, গত ২০ মে জেলা হাসপাতালে অনু মহাবত নামে এক মহিলা ভর্তি হন। নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে ওই মহিলা আরও কয়েকজনের সঙ্গে থাকতেন বলে হাসপাতালে জানানো হয়। তাঁর আসল বাড়ি কোথায় তা জানা যায়নি। ২০ মে ওই মহিলা একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম হওয়ায় শিশুটির ওজন ৮০০ গ্রাম ছিল। যে কারণে শিশুটিকে জেলা হাসপাতালের এসএনসিইউতে রাখা হয়েছিল। তিনদিন পর ওই মহিলার হাসপাতাল থেকে ছুটি হয়ে যায়। তবে নবজাতককে সুস্থ করার জন্য তার চিকিৎসা চলতে থাকে। সামান্য সুস্থ হওয়ার পর তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ আসেনি বলে অভিযোগ। এসএনসিইউ সিস্টার ইনচার্জ চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ওর বাড়ির লোক কেউ আসেনি। আমরাই ওর নাম রেখেছি। এত ছোট বাচ্চার মায়ের প্রয়োজন হয়। মাতৃদুগ্ধ প্রয়োজন ছিল সেটা পায়নি। এছাড়া ক্যাঙারু মাদার কেয়ার দিলে শিশুটি আরও দ্রুত সুস্থ হত। সেটাও ও পায়নি।’
হাসপাতালের এসএনসিইউ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জন্মের পর থেকে শিশুকন্যাটির অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম ছিল। যেখানে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ শতাংশের বেশি থাকার কথা, শিশুটির ক্ষেত্রে তা ৮০ শতাংশ ছিল। এসএনসিইউতে প্রথমদিন তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। এরপর চারদিন সিপ্যাপে রাখা হয়। এছাড়া রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকায় একবার রক্ত দেওয়া হয়। ১০০ দিনের বেশি সময় এসএনসিইউতে থাকার পর অনামিকা সুস্থ হয়ে ওঠে। তাঁর বাড়ি থেকে যে নম্বর দেওয়া হয় সেটায় যোগাযোগ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয় বাচ্চার মা মারা গিয়েছেন। পরিবারের লোক হাসপাতালে আসবে বলেও আসেনি। আলিপুরদুয়ার জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান অসীম ঘোষের বক্তব্য, ‘এই ধরনের বাচ্চার দেখভাল করার জন্য কর্মী রয়েছে। তাঁরা আপাতত শিশুটিকে দেখভাল করবে। শিশুকন্যাটিকে কেউ দত্তক নেবেন কি না সেটাও দেখা হচ্ছে। সরকারি পোর্টালে সেই তথ্য দেওয়া হবে।