সানি সরকার, শিলিগুড়ি: ‘রাস্তা তুমি কার?’, কেন্দ্র-রাজ্যের দড়ি টানাটানিতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH-10) নিয়ে এই প্রশ্ন উঠছে। মাসের পর মাস বেহাল হয়ে পড়ে থাকা এবং বৃষ্টির জেরে মাঝেমধ্যে জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। প্রশ্নে কেন্দ্র এবং রাজ্যের ভূমিকা। দুই সরকারের পরস্পর বিরোধী অবস্থান, একে অপরের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সমালোচিত হচ্ছে নানা মহলে। কবে রাস্তাটি চলাচলের যোগ্য হয়ে উঠবে, জানতে চাইছেন এই রুটের ওপর নির্ভরশীল সকলে।
আট মাস কেটেছে সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ের পর। অথচ হাল ফেরেনি ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের। সরকারি টানাপোড়েনের জন্য যে সিকিমের লাইফলাইনের অবস্থা শোচনীয়, নানা ঘটনা প্রসঙ্গে এমনটা মনে করছেন অনেকে। হ্রদ বিপর্যয়ের জেরে ১৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তার পাহাড়ি অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দিনের পর দিন বন্ধ ছিল গ্যাংটক এবং শিলিগুড়ির মধ্যে সরাসরি সড়ক সংযোগ। সেসময় ন্যাশনাল হাইওয়ে ইনফাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) রাস্তাটি ফের তৈরি করবে বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়। রাজ্যের পূর্ত দপ্তর সঠিকভাবে কাজ করছে না বলে অভিযোগ তোলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ট। তিনি এনএইচআইডিসিএল-কে দিয়ে কাজ করানোর কথাও বলেছিলেন। কাজ করেছিল এনএইচআইডিসিএল। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। হিল এবং রিভার সাইডে কয়েকটি গার্ডওয়াল তৈরির বাইরে কোনও কাজ করেনি সংস্থাটি। অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে সেই কাজ হওয়ায় কয়েকমাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে পুরোটা। রাজ্য পূর্ত দপ্তরের এক বাস্তুকার বলছেন, ‘নতুন করে সেই সমস্ত জায়গায় আমাদের কাজ করতে হয়েছে।’
হ্রদ বিপর্যয়ের জেরে তিস্তার জল বেড়ে জাতীয় সড়কের সমান উচ্চতায় চলে আসায় ওই সময় নতুন করে রাস্তা তৈরির আগে জিওলজিক্যাল সার্ভে করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেব্যাপারে কেন্দ্র এবং রাজ্যের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আদৌ করা হবে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
সম্প্রতি ভারী বৃষ্টির জেরে ফের বেহাল হয়ে পড়েছে জাতীয় সড়কটি। অধিকাংশ সময় ২৭ মাইল, লিকুভির, রবিঝোরার মতো জায়গাগুলিতে ধস পড়ছে। পাহাড় থেকে বোল্ডার গড়িয়ে পড়াও রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ফের কেন্দ্রের পক্ষে সওয়াল করেন রাজু বিস্ট। তঁার বক্তব্য, ‘রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে তৈরি করবে কেন্দ্র। সে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে কথা হয়েছে।’ গত আট মাসে রাজ্যের তরফে কোনও কাজ করা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন তিনি।
কালিম্পং জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য বলেছেন, ‘জাতীয় সড়কের টাকা তো কেন্দ্রকেই দিতে হবে। কেন্দ্র টাকা না দিলে কাজ হবে কীভাবে?’
তবে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, টু লেন রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর জন্য পূর্ত দপ্তরের তরফে ডিপিআর তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয় কি না, সেব্যাপারে নিশ্চিত নয় কেউ। পূর্ত দপ্তরের ন্যাশনাল ডিভিশনের এক বাস্তুকারের প্রতিক্রিয়া, ‘ডিপিআর তৈরি মানে কাজ হওয়া নয়। অর্থ বরাদ্দের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রের সন্তোষজনক রিপোর্ট পেতে হবে।’ অর্থাৎ সহজে দড়ি টানাটানিতে ইতি পড়ার সম্ভাবনা কম।’