শিলিগুড়ি: ২০ লিটারের জলের জার বিকোচ্ছে ১০০ টাকায়। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, খোদ বাড়তি দাম চুকোতে হচ্ছে পুরনিগমের পানীয় জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদের ওয়ার্ডে। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তো ক্ষোভ রয়েইছে, প্রশ্নের মুখে মেয়র পারিষদ এবং পুরনিগমের নজরদারিও।
নজরদারির অভাবে যে জল নিয়ে শহরে কালোবাজারি চলছে এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্পষ্ট হয় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চোখ রাখলে। শিলিগুড়ি শহরের (Siliguri) অধিকাংশ মানুষই বর্তমান অবস্থায় পান করছেন আরও প্ল্যান্টের পরিস্রুত পানীয় জল। বিভিন্ন প্ল্যান্ট সূত্রে খবর, বড় ধরনের প্ল্যান্ট হলে ২০ লিটার পরিস্রুত জলের ক্ষেত্রে খরচ হয় ৮-১০ টাকা। ছোট প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে তা বেড়ে ১৩-১৫ টাকা। তাহলে এত দাম নেওয়া হচ্ছে কেন? প্ল্যান্ট মালিকরা কাঠগড়ায় তুলছেন পাড়ার দোকানদারদের। তাঁদের বক্তব্য, সুযোগ বুঝে অনেকেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে নজরদারি রাখতে হবে পুরনিগম এবং প্রশাসনকে। একই বক্তব্য নর্থবেঙ্গল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহানন্দ মণ্ডলের। তিনি বলছেন, ‘সংগঠনের তরফে প্ল্যান্ট মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, আরও প্ল্যান্টে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু যখন তা খোলাবাজারে চলে যাচ্ছে, তখনই দ্বিগুণ, তিনগুণ দাম বাড়ছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে হবে সংশ্লিষ্ট মহলকেই।’
জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্তর দাবি, ‘মেয়র ইতিমধ্যে সমস্ত থানার আইসিদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমনভাবে কেউ অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ পেলেই কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’ নিজের ওয়ার্ড সম্পর্কেও তাঁর একই বক্তব্য।
পানীয় জল নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ উঠতেই বুধবার মেয়র গৌতম দেব বৈঠক করেন পুলিশের পাশাপাশি পানীয় জল বিক্রেতাদের সঙ্গে। সতর্ক করে দেওয়া হয় সব মহলকেই। কিন্তু পুরনিগমের পানীয় জল না পেয়ে যাঁরা খোলাবাজার থেকে জারের জল কিনছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা তিক্ত। অধিকাংশ মানুষেরই অভিযোগ, দামের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য নেই। যে যেমন পারছেন দাম নিচ্ছেন। নাম করা কোম্পানির নামে সাধারণ জল বিক্রি হচ্ছে বলেও অনেকের অভিযোগ। নজরদারি থাকলে এমনটা হতে পারে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
দেশবন্ধুপাড়ার সম্রাট সান্যাল বলছেন, ‘বুধবার ২০ লিটারের জার কিনেছিলাম ৪০ টাকায়। এদিন তার দাম বেড়ে ৬০ টাকা হয়ে গিয়েছে। জানি না আরও কত দাম বাড়বে।’ সূর্যনগরের বলাকা মোড় সংলগ্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সেখানে দাম আগের মতো ৪০ টাকাতেই আটকে রয়েছে। সুকান্তপল্লিতে কোথাও ৪০, কোথাও আবার ৫০ টাকা। বিধান মার্কেট, হাকিমপাড়ায় ৭০-৮০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে লেবেলহীন জলের জার। ফলে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। তবে বছরের ১২ মাস যাঁরা বাড়িতে বসে জলের জার পেয়ে থাকেন, তাঁরা আগের মতোই গুনছেন ৩০ টাকা। এই ক্ষেত্রেও দূরত্বের কারণে দামের কিছুটা হেরফের রয়েছে। বাড়ি বাড়ি জল বিক্রি করা চিন্ময় গোস্বামী বলেন, ‘নিজের হাজিরা, গাড়ি এবং গাড়ির তেলের খরচ মিলিয়ে ৪০ টাকা না নিলে চলে না।’ কিন্তু বাড়তি টাকা আর কতদিন গুনতে হবে সেটা বুঝতে পারছেন না শহরবাসী।