দেবদর্শন চন্দ, কোচবিহার: অমিয়ভূষণের শহর কোচবিহার (Cooch Behar)। কিন্তু জন্মদিনে নিজের শহরে একপ্রকার ব্রাত্যই রইলেন তিনি। প্রতিবছর বইমেলার শুরুর দিন অমিয়ভূষণকে স্মরণ করে একটি সম্মাননা প্রদান করা হয় ঠিকই। কিন্তু এদিন জেলা প্রশাসন কিংবা কোনও সংস্থার তরফে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী তথা নাট্যকার অমিয়ভূষণের জন্মদিন পালন করতে দেখা গেল না।
হাতে গোনা কয়েকজন অবশ্য তাঁর স্মরণে সোশ্যাল মিডিয়ায় দু’চার কথা লিখেছেন। আর মজুমদার পরিবারের পক্ষ থেকে পালন করা হল অমিয়ভূষণের জন্মদিন। সেখানে কয়েকজন কবি-সাহিত্যিকের উপস্থিতি নজরে এসেছে।
‘বাবার জীবদ্দশা থেকেই তাঁর জন্মদিনে সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান করা হত’, বললেন লেখকের মেজো মেয়ে এথেনা। তিনি বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর করোনার আগে পর্যন্ত নিয়মিতভাবে আমরা জন্মদিন পালন করতাম। এখন আমাদেরও বয়স হয়ে যাওয়ায় সেভাবে বড় করে অনুষ্ঠান করা হয়নি।’ বাবার জন্মদিন উপলক্ষ্যেই দীর্ঘদিন বাদে কলকাতা থেকে কোচবিহারে নিজের বাড়িতে এসেছেন তিনি। লেখকের জন্মদিনটি জেলা প্রশাসন কিংবা কোচবিহারের কবি-সাহিত্যিকদের উদ্যোগে সেভাবে পালন করা হয় না। এপ্রসঙ্গে এথেনা বলেন, ‘আমরা কোনওদিনই প্রশাসনের মুখাপেক্ষী ছিলাম না। বাবাও ছিলেন না। সাহিত্যচর্চা তিনি করেছেন নিজের তাগিদে, নিজের ভালোবাসায়। বাবার পাঠককুল আছে। সাহিত্য কোনওদিনই সর্বসাধারণের বিষয় নয়। যাঁরা পড়ার, তাঁরা এখনও বাবার লেখা পড়েন।’
এদিন সকালে লেখকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মেজো মেয়ে এথেনা এবং পুত্র আনন্দজ্যোতি মজুমদারের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটান এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়। লেখকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন। সন্ধ্যায় ‘অমিয়ভূষণ এবং বাংলা সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা সহ আবৃত্তি, গান পরিবেশিত হয় লেখকের বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লেখকের জন্মদিন পালন করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক তথা কবি সুবীর সরকার। তিনি বলেন, ‘অমিয়ভূষণকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। তিনি শুধু কোচবিহার নয়। বাংলা সাহিত্যেরও সম্পদ। জেলা প্রশাসনের উচিত ছিল সরকারি অনুষ্ঠান করে তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাবার। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’ এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কোচবিহারের তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক অঙ্গীরা দত্ত এড়িয়ে গিয়েছেন।
বাণেশ্বর সারথীবালা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা এখনও তাঁকে বুঝতেই পারিনি। কেবল বইমেলার একদিনই আমরা তাঁকে নিয়ে জানতে পারি। অমিয়ভূষণকে নিয়ে আমাদের চর্চা আরও বাড়ানো উচিত।’
বছরখানেক আগে ঔপন্যাসিক অমিয়ভূষণকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সাহিত্য উৎসব ও লিটল ম্যাগাজিন মেলার আয়োজন করেছিল। সেখানে অমিয়ভূষণকে নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেসময় কলেজের একটি ঘরে সাহিত্যিকের জীবনের স্মৃতি, সাহিত্যশৈলী, প্রাপ্ত সম্মাননা, চিত্রাবলী, বিখ্যাত বই, প্রচ্ছদপট সহ সব কিছু অনুরাগীদের দেখার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে সেসব সংরক্ষণ করে রেখেছে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর। কথা ছিল, যদি কোনও স্কুল, কলেজ বা কোনও প্রতিষ্ঠান যদি অমিয়ভূষণকে নিয়ে কাজ করতে চান তাদের বিনামূল্যে সেগুলো সরবরাহ করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে, এদিন এমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।