সন্তু চৌধুরী, মালবাজার: জাতীয় স্তর থেকে চা বাগানের মাঠ, সব জায়গাতেই এখন ফুটবল টুর্নামেন্টের ভরা মরশুম। কয়েকদিন পরেই শুরু হবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। বর্তমান সময়ের ফুটবলের জাতীয় স্তরের সবথেকে বড় টুর্নামেন্ট। তার আগে এই মুহূর্তে চালসা, নাগরাকাটা, ওদলাবাড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হচ্ছে বড় বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট। খেলতে আসছে প্রতিবেশী জেলা, রাজ্য এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, ভুটানের দল। এর মাঝে ব্যতিক্রম শুধু মালবাজার (Malbazar) শহর। যখন আশপাশের সমস্ত মাঠে চলছে ফুটবলের লড়াই, তখন মালবাজারের মাঠগুলিতে শুধুই শূন্যতা।
মাল শহরে প্রতিভার অভাব নেই। শহরের বহু ফুটবলার সুনামের সঙ্গে ফুটবল খেলছেন বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। এই শহরেরই ছেলে মৃণাল সরকার বর্তমানে জাতীয় স্তরের রেফারি। মৃণালের কথায়, ‘টুর্নামেন্ট না হলে খেলোয়াড়রা নিজেদের প্রতিভা দেখাবে কোথায়?’ অনেকেরই বক্তব্য, মাল শহরে হাতেগোনা কয়েকটি ক্লাব খেলাধুলো এবং অন্যান্য উদ্যোগ নিলেও বেশিরভাগ ক্লাব দুর্গাপুজো, কালীপুজো করে গোটা বছর শান্ত হয়ে বসে থাকে। অথচ পুজো সহ বিভিন্ন সরকারি অনুদান এই সমস্ত ক্লাবই পাচ্ছে। সরকারি স্তরেও কোনও উদ্যোগ নেই শহরে। এই বছর জেলা পুলিশের ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ছাড়া শহরের মাঠে কোনও ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়নি। আর তাই হতাশ শহরের তরুণ ফুটবলাররা।
মালবাজারের ছেলে সুজিত সিং এই মুহূর্তে ফুটবল খেলেন কলকাতার মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এই ফুটবলার ফোনে জানান, ‘ফুটবলে সফল হতে গেলে গোটা বছর প্র্যাকটিস দরকার। সঙ্গে টুর্নামেন্ট খেলতে হবে, তাহলেই বড় মঞ্চের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারেন খেলোয়াড়রা।’
একসময় শহরজুড়ে বড় বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করত ক্লাবগুলো। মহকুমা হওয়ার পর মহকুমা স্তরের ফুটবল প্রতিযোগিতা চালু হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। মাল পুরসভার উদ্যোগেও তিন বছর বিশাল আকারে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির পর থেকে সেই টুর্নামেন্টও বন্ধ। পুরসভার অধীনে ওয়ার্ড লিগগুলোও আর হচ্ছে না। তাই প্রতিভা থাকলেও মঞ্চ না পেয়ে তরুণ খেলোয়াড়রা অনেক সময় শহর ছাড়ছেন।
একসময় শহরের রেলওয়ে ময়দানে ফুটবলের কোচিং ক্যাম্প চালু ছিল। যা বর্তমানে বন্ধ। নেই আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও। তারপরেও শহরের ফুটবলের প্রাপ্তি কিন্তু কম নয়। বিদ্যালয়ের স্তরের সুব্রত কাপ হোক বা জেলা স্তরের ডিভিশন লিগ, সবকিছুতেই উজ্জ্বল শহরের বিভিন্ন দল। তারপরেও শহরের সরকারি বেসরকারি স্তরে কোনও ফুটবল টুর্নামেন্ট না হাওয়ায় একদিকে যেমন হতাশ শহরের সাধারণ ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ, অন্যদিকে সুযোগ না পেয়ে মুষড়ে পড়ছেন শহরের ফুটবলাররা। স্থানীয় তরুণ ফুটবলার দেবায়ন মজুমদার বলেন, ‘বাইরে গিয়ে প্রচুর ফুটবল খেলছি। কিন্তু শহরের মানুষের সামনে খেলতে চাই। সেই ইচ্ছে পূর্ণ হচ্ছে না।’