পুরাতন মালদা: পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে জেলার একমাত্র সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলটি। বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। স্কুলে অষ্টম শ্রেণির পর পড়ার সুযোগ নেই ছাত্র-ছাত্রীদের। ফলে বাধ্য হয়েই মাঝপথে ছাড়তে হচ্ছে পড়াশোনা। আদিবাসীদের মধ্যে বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। দ্রুত উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত করার দাবি। এদিকে স্কুলের বেহাল দশা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তর্জা। রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বিজেপি সাংসদ। পালটা জবাবও দিয়েছে তৃণমূল।
মালদা জেলার পুরাতন মালদা ব্লকের যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের থুকরাবাড়ি গ্রামে রয়েছে থুকড়াবাড়ি অলচিকি নিউ সেটআপ প্রাইমারি বিদ্যালয়। জেলার একমাত্র সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুল। যেখানে অলচিকি ভাষায় চলে পঠন পাঠন। ২০১৮ সালে স্কুলটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত চলত পঠন-পাঠন। পরবর্তীতে ২০২০ সালে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। বর্তমানে প্রায় ৮৫ জন ছাত্রছাত্রী পাঠরত এই স্কুলে। সাতজন শিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু স্কুলে রয়েছে মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ। ফলে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। নেই হোস্টেলও। যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও রয়েছে সমস্যা। ফলে জেলার একমাত্র সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলে বিভিন্ন প্রান্তের আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করতে চাইলেও তাঁরা আসতে পারছে না। এদিকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার পরে জেলায় অন্য কোনও সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুল না থাকায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। কারণ অন্য জেলায় যাওয়ার মত সামর্থ্য নেই সকলের। তাই দ্রুত স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত উন্নীত করার জোরাল দাবি উঠছে।
মতিলাল হাঁসদা নামে এক অভিভাবক জানান, একেই জেলায় মাত্র একটা সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুল। সেখানেও পরিকাঠামো নিয়ে বহু সমস্যা। অষ্টম শ্রেণির পর ছেলেমেয়েদেরকে কোথায় পড়াব আমরা? অন্য জেলায় পাঠানোর মতো সামর্থ্য তো সকলের নেই।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা রামা ঠাকুর জানান, সত্যি স্কুলে অনেক সমস্যা রয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। হোস্টেল এবং অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়ন হলে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও কাজ হয়নি।
স্থানীয় অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সৌমিত্র সরকার বলেন, ‘সমস্যার বিষয়গুলিকে নিয়ে আমি উচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।‘
উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের আদিবাসীদের প্রতি মেকি ভালোবাসা রয়েছে। অলচিকি হরপে পঠন-পাঠনের পর তারা তো আর অন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না। ফলে তাদের পড়া ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এটা আদিবাসীদের বিপদের মধ্যে ফেলা হচ্ছে। যখন স্কুল করাই হল তবে উপযুক্ত পরিকাঠামো সহ করা উচিত ছিল।
পালটা তৃণমূলের এসটি মোর্চার জেলা সভাপতি চুনিয়ার মুর্মুর দাবি, ইতিমধ্যেই জেলার অন্যান্য ব্লকে অলচিকি হরফে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থার জন্য ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সেই ব্যবস্থা হবে। ওই স্কুলেও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হবে। বিজেপির রাজনীতি করার জন্য এসব কথা বলছে।