শিবশংকর সূত্রধর ও চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার: বাসের যাত্রী নিরাপত্তা কার্যত শিকেয়। হাতেগোনা কয়েকটি বাদ দিয়ে দূরপাল্লার বাসগুলিতে সিসিটিভি নেই। কারা কোথা থেকে বাসে উঠছে সে বিষয়ে কারও কাছে কোনও তথ্যও থাকছে না। বাসস্ট্যান্ডগুলিতে নিয়মিত পুলিশি নজরদারিও নেই বলে অভিযোগ। সোমবার ঘোকসাডাঙ্গায় (Ghoksadanga) বাসে ডাকাতির (Bus Dacoity) ঘটনার পর যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই দূরপাল্লার বাসে উঠতে ভয় পাচ্ছেন। যাত্রী সুরক্ষায় দূরপাল্লার বাসে সিসিটিভি বসানো সহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জোরালো হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘সোমবারের ঘটনার পর বাসগুলিতে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।’
কোচবিহার (Coochbehar) থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (NBSTC) বেশ কিছু বাস দক্ষিণবঙ্গে যায়। কিন্তু এই বাসগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। সমস্ত বাসে যে সিসিটিভি নেই তা সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘সোমবার বেসরকারি বাসটিতে ডাকাতির ঘটনায় অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যাত্রী নিরাপত্তায় বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের নতুন বাসগুলিতে সিসিটিভি রয়েছে। পুরোনো বাসগুলিতে ব্যাটারিচালিত সিসিটিভি বসানোর চেষ্টা চলছে। সমস্ত বাসে পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং স্থানীয় থানার আইসি বা ওসিদের ফোন নম্বর ডিসপ্লে করার বন্দোবস্ত থাকবে। এই নম্বর বাসের চালক ও কনডাক্টরদের কাছেও থাকবে। আরও বেশি নজরদারির জন্য বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের জানানো হয়েছে।’ আগামী সাতদিনের মধ্যে এই ব্যবস্থাগুলি যাতে চালু করা যায় সেই চেষ্টা চলছে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। কোচবিহারে কমবেশি ২০টি বেসরকারি বাস নিয়মিত দক্ষিণবঙ্গ ও অসমের মধ্যে যাতায়াত করে। সেখানেও একই চিত্র দেখা গিয়েছে। আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক তপন গুহ বলেন, ‘বাসে ডাকাতির ঘটনায় আমরাও উদ্বেগে রয়েছি। যে সমস্ত যাত্রীরা বাসে ওঠা-নামা করেন তাঁদের তো আমাদের পক্ষে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। সেজন্য পুলিশি নজরদারিই বাড়াতে হবে।’
অসমে যাওয়ার জন্য মৌমিতা দাস সোমবার কোচবিহারের বীরেন্দ্রচন্দ্র দে সরকার বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর কথায়, ‘ব্যক্তিগত কাজে একাই অসমে যেতে হচ্ছে। অনেকটা দূরের পথ। রাস্তায় কোনও বিপদ হলে কীভাবে আমাদের সুরক্ষা দেওয়া হবে তা জানি না। বাসগুলিতে অন্তত সিসিটিভি বসিয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে সেগুলি নিয়মিত নজরদারি করা প্রয়োজন। তাতে কোনও বাসে অপ্রীতিকর ঘটনা হলে যাতে বাইরে থেকে সহযোগিতা করা যায়।’ অসম-কোচবিহার রুটের একটি বাসের চালক বিনয় চন্দ বলেছেন, ‘বাসে সিসিটিভি নেই। তবে রাস্তায় মাঝেমধ্যে বাস থামিয়ে পুলিশ গাড়ি পরীক্ষা করে।’
কয়েকদিন আগে কোচবিহারের এনবিএসটিসি’র বাস টার্মিনাসে থাকা বাস সহ বেশ কিছু বাসে গাঁজা পাওয়া গিয়েছিল। নজরদারির অভাব থাকায় দুষ্কতীরা গাঁজা নিয়ে বাসে উঠে পড়েছিল। পরে অবশ্য তা ধরা পড়ে। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও অধিকাংশ বাসই যেখান-সেখান থেকে যাত্রী তোলে, নামায়। ফলে কারা কখন বাসে উঠে পড়বে তা নিয়েও যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। বাস মালিক অঙ্কুর দে’র কথায়, ‘রাস্তায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হলে এই সমস্যা মিটবে।’