শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: কতটা খারাপ হলে তাকে কুখ্যাত বলা যায়?
এ নিয়ে তর্ক বহুদূর যেতেই পারে। কিন্তু যদি আদালতে বিচারপতির সিংহাসনে বসে কেউ ‘কুখ্যাত’ তকমা সেঁটে দেন, তবে? না, এ তকমা কোনও দুষ্কৃতীকে দেওয়া হয়নি, পেয়েছে শিলিগুড়ি (Siliguri) কমিশনারেটের অধীন ভক্তিনগর থানা (Bhaktinagar Police Station)। আর যা নিয়ে এখন শোরগোল পুলিশ মহলে।
শুধু ভক্তিনগর অবশ্য নয়, বিচারপতির ক্ষোভের মূলে রয়েছে মাটিগাড়া থানাও। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানি চলাকালীন এই তকমা দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘ভক্তিনগর থানা একটি নটোরিয়াস (কুখ্যাত) থানা। শিলিগুড়ি কমিশনারেট এলাকায় এই থানা এখন মাথাব্যথার কারণ।’ পরে বিচারপতির সংযোজন, ‘শুধু ভক্তিনগর নয়, মাটিগাড়া থানাও দিন-দিন উত্তরবঙ্গের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আসামির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর না হওয়া সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি চলাকালীন এভাবেই কমিশনারেটের দুই থানাকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। সরকারপক্ষের আইনজীবীকে তিনি বলেন, ‘জেনারেল ডায়েরি করার জন্য কিংবা অভিযোগ দায়েরের জন্যও যদি হাইকোর্টে আসতে হয়, তাহলে বিচার পেতে অনেকটাই সময় লেগে যায়। আসলে থানায় এমন একটা কালচার চলছে, যা পুরো প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে।’
শ্যামপুকুর থানার একটি মামলার আসামি শিলিগুড়িতে আছে বলে জানানো হয়েছিল ভক্তিনগর থানাকে। অভিযোগকারীর দায়ের করা সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারপক্ষের আইনজীবী সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন একটি রিপোর্ট পেশ করেন। রিপোর্টে দেখা যায়, শ্যামপুকুর থানার কাছ থেকে খবর পেয়ে ভক্তিনগর থানা ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল ঠিকই। কিন্তু জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে ধৃতকে তোলা হলে তার ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদনই জানানো হয়নি। ফলে জলপাইগুড়ি জেলা আদালত অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে আসামিকে ছেড়ে দেয়। সেক্ষেত্রে চলতি মাসের ৩০ তারিখ কলকাতার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেটের পঞ্চম কোর্টে হাজির হওয়ার শর্ত দেওয়া হয় তাঁকে।
আশ্চর্যের বিষয়, আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও সেটা শ্যামপুকুর থানাকে জানায়নি ভক্তিনগর থানা। যে কারণে ট্রানজিট রিমান্ডের বিষয়টি উহ্য থেকে গিয়েছে। আর তা নিয়েই কার্যত গোসা বিচারপতির। তীর্থঙ্কর ঘোষ সরকার পক্ষের আইনজীবীকে এদিন প্রশ্ন করেন, অভিযুক্তের ট্রানজিট বেল নাকি ইন্টেরিম বেল চাওয়া হয়েছিল? এখানে তো কিছুই স্পষ্ট করে বলা নেই। এটাই সমস্যা ভক্তিনগর থানার।’
এরপর সরকার পক্ষের আইনজীবী ইন্টেরিম বেল অর্থাৎ অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের কথা জানালে ভক্তিনগর থানাকে তুমুল ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘ভক্তিনগর থানায় কীভাবে কাজ চলে, সেটা জানা রয়েছে। সেটা একটা কুখ্যাত থানা। জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে কাজ করার সময় দেখেছি, ভক্তিনগর আর মাটিগাড়া থানার কী অবস্থা।’
গত ৫ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিল শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশ। খুনের মামলায় প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান রেকর্ড করা হয়নি বলে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি রাজা বসুচৌধুরী। সেই ঘটনার দিন দশেকের মধ্যে আদালতে আবার মুখ পোড়ায় প্রশ্নের মুখে শিলিগুড়ি পুলিশ। যদিও এব্যাপারে পুলিশ কমিশনারেটের কোনও কর্তাই মুখ খুলতে চাইছেন না।
পুলিশ কমিশনার সি সুধাকরের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।