এসসি ইস্টবেঙ্গল – ০
হায়দরাবাদ এফসি – ৪ (ওগবেচে হ্যাটট্রিক, অনিকেত)
ফাতোরদা : এক ম্যাচের মধ্যেই স্বপ্নের উড়ান একেবারে পপাত ধরনীতল। এটিকে মোহনবাগানের পর সোমবার এসসি ইস্টবেঙ্গল-হায়দরাবাদ এফসি দুই দলই কালো ব্যান্ড পরে নামে এবং এক মিনিট নিরবতা পালনও হয়। কিন্তু তাঁর প্রিয় দলের হাল দেখে এই সম্মানের পরেও নিশ্চিতভাবেই কষ্টই পেয়েছেন সুভাষ ভৌমিক।
পাঁচ ম্যাচ নির্বাসনে থাকার পরে এদিন আন্তোনিও পেরোসেভিচের প্রথম একাদশে অন্তর্ভুক্তি লাল হলুদ বাহিনীকে শক্তিশালী করবে বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বার দুয়েক হিতেশ শর্মা, শৌভিক চক্রবর্তীদের হাল্কা কনুই চালাচালির পরেই কী আশ্চর্য, একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেলেন তিনি। এমনিতেই এই দলটার ধার এতই কম যে এফসি গোয়ার সঙ্গে মস্তানি করা আর হায়দরাবাদের মতো শক্তিশালী ও তারুন্যে ভরপুর একটা দলের মোকাবিলা করার মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমার্ধেই ০-৩ করে দিয়ে হায়দরাবাদ সেটা আরও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিল। ওগবেচে বার্থেলোমিউ-জোয়াও ভিক্টরদের নেতৃত্বের সঙ্গে বাকি দলটার তীব্র প্রেসিং ফুটবলের কাছে শুরুতেই আত্মসমর্পন করে ফেলেন সেমবোই হাওকিপ-নাওরেম মহেশরা।
১২ থেকে ২২ মিনিটের মধ্যে গোটা পাঁচেক কর্ণার হওয়া দেখেই বোঝা গিয়েছিল, হায়দরাবাদের গোল পাওয়াটা শুধুই সময়ে অপেক্ষা। ঠিক সেটাই হল টানা তিনটে কর্ণার হওয়ায়। শৌভিক চক্রবর্তীর তোলা বলে ওগবেচের হেডটা হাওকিপের গায়ে লেগে গোলে ঢোকার সময়ে অরিন্দম হাতে পেয়েও রাখতে পারলেন না। তাঁর মতো অভিজ্ঞ গোলরক্ষকের ভুলে এই মরশুমে বেশ কিছু ম্যাচে ডুবতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। একইসঙ্গে ভুল মারিও রিভেরারও। ডার্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে একম ওপেন ফুটবল খেলতে গিয়ে দলকে ডোবালেন তিনি। এবং দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর দল যখন খেলায় ফেরা শুরু করেছে তখন সৌরভ-অঙ্কিতকে তুলে নেওয়াও বড় ভুল তাঁর।
এদিন প্রথম গোলটা খেয়ে খানিকটা যেন গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন ড্যারেন সিদোয়েল-মহেশরা। ৩৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মহম্মদ রফিকের ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে হাওকিপ প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন, যদি না লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমনি গোললাইন থেকে চাপড়ে বার করতেন। ভিড়ের মধ্যে ভেসে আসা ফিরতি বলও ফেরান ভিক্টর। কিন্তু সেসময়ই খেলার গতির বিপরীতে পরপর দুটো গোল বিরতির আগেই যাবতীয় লড়াই শেষ করে দেয়। ওগবেচের দ্বিতীয় গোলটা হল আদিল খানের ভুলে। হাভিয়ের সিভেরিও হেডে বল নামিয়ে দিলে আগুয়ান ওগবেচেকে ওখানেই ট্যাকল করতে গিয়ে মাটি ধরলেন আদিল এবং পরে অমরিজৎ। প্রাক্তন পিএসজি স্ট্রাইকার অরিন্দমকে দেখেশুনে কাটিয়ে জালে বল রাখতে কোনও ভুল করেননি।
৭৪ মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিক ও এই মরশুমে ১২তম গোলটি করে ফেললেন ওগবেচে। তিনি ছাড়া আর ম্যাচের সেরা আর কেইবা হতে পারেন! মাত্র চার মরশুমের মধ্যে ৪৭ গোল তাঁর। অর্থাৎ আর দুটোতেই ছাপিয়ে যাবেন ফেরান কোরোমিনাস ও সুনীল ছেত্রীকে। দ্বিতীয় গোলের দুমিনিটের মধ্যে অনিকেত যাদবের গোলটা একক কৃতিত্বে। তাঁর বাঁদিক থেকে নেওয়া মাটি ঘেঁষা শট গোটা লাল হলুদ ডিফেন্সকে দাঁড় করিয়ে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে গোলে ঢোকে। দ্বিতীয়ার্ধে আর বাড়তি খাটাখাটানি না করে কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলে মন দেয় হায়দরাবাদ। তাতেই আসে তিন নম্বর গোলটা।
এদিনই প্রথম মাঠে নামলেন নতুন আসা ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার মার্সেলো। ডাইভ দিয়ে পেনাল্টি পাইয়ে দেওয়া ছাড়া বিশেষকিছু করেননি। যদিও তাতেও গোল হল না ফ্রানিও পার্চের শট কাট্টিমনি আটকে দেওয়ায়। হায়দরাবাদ যেমন এদিন একে উঠে এল তেমনি আবার এগারো নম্বরে নেমে গেল এসসি ইস্টবেঙ্গল।