পুরাতন মালদা: শুক্রবার পুরাতন মালদা শহরের তন্তুবায় সমবায় সমিতির নির্বাচনে ভোটারদের দেওয়া হল মটন বিরিয়ানির প্যাকেট। কেউ খেলেন ভোটদান কক্ষের ভিতরেই। কেউবা সাদা প্লাস্টিকের থলে হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাড়ির উদ্দেশে। খাসির মাংসের বিরিয়ানি, সঙ্গে আলুকেও কেউ হাতছাড়া করতে চাননি। ফলে ভোট দেওয়ার চাইতে বিরিয়ানিতে মন ডুবে ছিল অনেকের। স্বাভাবিকভাবেই পেট পুরে খেয়ে ব্যালটে ভোট দেন সমিতির সদস্যরা।
সমবায় সমিতি তৈরি হওয়ার পর এই প্রথম সেখানে ভোট হল। ভোট উপলক্ষ্যে প্রায় ৩০০ প্যাকেট মটন বিরিয়ানির অর্ডার দেওয়া হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরাও কবজি ডুবিয়ে খেয়েছেন।
কথা হচ্ছিল সাহাপুর ছাতিয়ান মোড়ের বাসিন্দা নিত্যকুমার সরকার, সুনীল সিংহের সঙ্গে। নিত্যকুমার সরকার বলেন, ‘ভোট কাকে দিয়েছি সেটা বলছি না। এমনকি আমার বৌকেও নয়। তবে খাসির মাংস এক পিস পেলেও বিরিয়ানির টেস্ট ভালো ছিল।’
ওনাকে মাঝপথে থামিয়ে দেন সুনীল সিংহ। তিনি বলেন, ‘ওই এক পিস মাংস তিন পিসের সমান ছিল। সাইজে বড় থাকায় তৃপ্তি করে খেয়েছি। তারপর ভোট দিয়েছি।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মহিলা ভোটার বলেন, চিকন চালের ভাত ছিল। মনে হচ্ছে বাসমতী। তবে মাংসের পিস একটার বেশি হলে ভালো হত।
এদিন ভোটারদের কাছে বিরিয়ানির প্যাকেট হাতে উৎসবের মেজাজে ভোট হলেও তৃণমূল- বিজেপি দুই শিবিরে টানটান উত্তেজনা লক্ষ করা গিয়েছে। ফলে এদিন সকাল থেকে প্রচুর পুলিশ মতায়েন ছিল। এদিন বেলা দশটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত ভোটগ্রহণ পর্ব চলে। যদিও ফলাফল পেতে সন্ধ্যা গড়ায়।
তন্তুবায় সমবায় সমিতি তৈরি হওয়ার পর থেকে সদস্যরা হাত তুলে ভোট দিতেন। সেই ভোটেই সম্পাদক, সভাপতি, সহসভাপতি নির্বাচিত হতেন। বর্তমানে সমিতির সম্পত্তি কয়েক কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে ওই বোর্ড দখলে তৃণমূল বিজেপি মরিয়া হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই ৯টি আসনে দুই দল মিলিয়ে ১৮ জন প্রার্থী শুক্রবার ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ভোটার ছিল ২২৫। ভোট পোল হয় ১৪১ টি।
ফলাফল প্রকাশ হলে দেখা যায় তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা পেয়েছেন পাঁচটি আসন। চারটি আসন পেয়েছে পদ্ম। ভোটের ফল বলছে, সমবায় সমিতির ক্ষমতা যাচ্ছে ঘাসফুলের হাতে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘আমরা ঘুঘুর বাসা ভাঙতে পেরেছি।’ বোর্ডের দলীয় প্রতীকে ভোট না হলেও দুই রাজনৈতিক দলের ওই ভোট ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা লক্ষ করা গিয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত কড়া পুলিশি প্রহরার জেরে কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি। প্রাক্তন সম্পাদক অতুলচন্দ্র সরকার বলেন, সমিতির তরফ থেকেই প্রত্যেক সদস্যদের জন্য খাওয়ার প্যাকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।