পুরাতন মালদা: পুরাতন মালদা (Old Malda) শহরে তো বটেই, এমনকি গ্রামের ছোটোখাটো হোটেল ব্যবসার আড়ালে চলছে মধুচক্রের ব্যবসা। এতে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবাড়ি থেকে শুরু করে সাহাপুর, কালুয়াদিঘি, মিশন রোড, পান্ডুয়া সহ নানা এলাকায় গজিয়ে ওঠা কিছু হোটেলে দিনের পর দিন অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চক্রের পান্ডারা কল গার্লদের ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠিয়ে বুকিং নিচ্ছে বলেও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে।
কিছুদিন আগে নারায়ণপুরের একটি হোটেলে মধুচক্রের প্রতিবাদ করেছিলেন গ্রামবাসীরা। সেই হোটেলটি পুলিশ আপাতত সিল করেছে। এই সব রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে দিনে খাবার বিক্রি করা হলেও রাতে সেই হোটেলের চেহারা বদলে যাচ্ছে। অভিযোগ, রাতে সেখানে রমরমিয়ে চলে মধুচক্রের কারবার।
এই চক্রের কার্যকলাপ এতটাই সুসংগঠিত যে, খদ্দের ধরার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ। কল গার্লদের আকর্ষণীয় ছবি সংগ্রহ করে খরিদ্দারদের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। তারা ছবি দেখে মেয়ে পছন্দ করে বুকিং করেন। এরপর হোটেলের রুম নম্বর এবং সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজনে কেউ বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে বেশি খরচ করতে হয়। অভিযোগ, হোটেলের কর্মীরাও ওই অবৈধ কারবারে জড়িত এবং তারা মোটা টাকার বিনিময়ে সবকিছু জেনেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দেখছি রাতে এই সব হোটেলগুলোতে অচেনা লোকজনের আনাগোনা বাড়ে। অনেক অল্পবয়সি মেয়েদেরও যাতায়াত চোখে পড়ে। প্রথমে আমরা কিছু বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন যা শুনছি তাতে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠিয়ে বুকিংয়ের কথা তো মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে মালদা বিধানসভার বিজেপির বিধায়ক গোপালচন্দ্র সাহার অভিযোগ, ‘নারায়ণপুরের যে হোটেলে মধুচক্র হচ্ছিল তা নিয়ে আমরা বহুবার প্রতিবাদ করেছি। সেটি আপাতত বন্ধ থাকলেও অন্যান্য হোটেলে অবৈধ কারবার আমার কানে এসেছে। কোন কোন হোটেলে এসব হয় সেটি পুলিশের নখদর্পণে। পুলিশ ইচ্ছে করলে বেআইনি কাজ বন্ধ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।’
পুরাতন মালদা থানার এক আধিকারিকের কাছে এপ্রসঙ্গে বক্তব্য চাওয়া হলে তিনি জানান, এই বিষয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। তবে যদি এমন কাজকর্মের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছে এবং এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ আটকাতে বদ্ধপরিকর।
ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা চম্পাই বেসরা সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, ‘নারায়ণপুর, পান্ডুয়া এবং কালুয়াদিঘি এলাকার কিছু হোটেলে মধুচক্রের মতো অসামাজিক কার্যকলাপের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদিও এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ কীভাবে সংগঠিত হয়, সেসম্পর্কে কোনও ধারণা নেই।’ তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশের নাকের ডগায় দিনের পর দিন এই অসামাজিক কার্যকলাপ চললেও কেন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা অবিলম্বে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন। একইসঙ্গে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টগুলিতে নিয়মিত তল্লাশি চালানোরও আবেদন জানিয়েছেন।