নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীরের নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র পহলগামের (Pahalgam Terror Attack) শান্ত-নিভৃত পরিবেশ আচমকা কেঁপে উঠেছিল বুলেটের শব্দে। ২৬ জন নিরীহের প্রাণহানিতে গোটা দেশ যখন শোকে ও ক্ষোভে উত্তাল, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় তদন্তে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য- এই হামলা শুধু বন্দুকের ছিল না, এর পিছনে ছিল এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছায়াও।
তদন্তকারী সংস্থা ইতিমধ্যেই তিনজন জঙ্গির স্কেচ প্রকাশ করেছে। তবে শুধু তিনজন জঙ্গিই নয়, পহলগামের ঘটনায় পর্দার আড়ালে রয়েছে আরও তিনজন। বৈসরণ পার্কের বাইরে দু-জন চা বিক্রেতা আর একজন ভেলপুরিওয়ালা ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, খোঁজ চলছে এই তিনজনের। কারণ, তারাই এই ঘটনার পটভূমি তৈরি করে দিয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, এরাই ছিল পহলগাম ঘটনার মেন হ্যান্ডলার।
বিভিন্ন সূত্রের খবর, পর্যটকদের ওপর হামলা চালানোর জন্য জঙ্গিরা ব্যবহার করেছিল ‘অ্যালপাইন কোয়েস্ট’ নামের একটি অ্যাপ, যা সাধারণত পাহাড়ি ট্রেকিং বা অভিযানের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এবার সেই অ্যাপই পরিণত হয়েছে একটি প্রাণঘাতী হাতিয়ারে। ঘন জঙ্গলের গোপন পথ ধরে হামলাকারীরা যে নিখুঁতভাবে পর্যটকদের অবস্থানে পৌঁছে যায়, তার নেপথ্যে ছিল এই অ্যাপের দিকনির্দেশ।
এই অ্যাপ অফলাইনে কাজ করে, অর্থাৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকলেও এটি তার কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। ফলে সেনাবাহিনীর নজর এড়িয়ে জঙ্গিরা নির্ভুলভাবে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পেরেছে। তদন্তকারী সংস্থার প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই হামলা ছিল একেবারে পরিকল্পিত এবং প্রযুক্তিনির্ভর। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ মদতেই সীমান্তপারে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাকিস্তান থেকেই ‘হ্যান্ডলার’রা রিয়েল-টাইমে নির্দেশ দিচ্ছিল আর অ্যালপাইন কোয়েস্ট-এর মাধ্যমে জঙ্গিরা পেয়েছিল নিখুঁত নেভিগেশন সাপোর্ট।
এই অ্যাপের অফলাইন সংস্করণে আগেভাগেই সংরক্ষিত ছিল সিআরপিএফ ক্যাম্প, ব্যারিকেড, নদী-নালা, এমনকি গুহার অবস্থানও। শুধু পহলগাম নয়, এর আগেও জম্মু এবং কাঠুয়ায় হামলার সময় এই অ্যাপ ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।
অনেকে মনে করেন, জঙ্গিরা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা আরও উন্নত এবং ট্র্যাকিং এড়ানো যায় এমন অ্যাপ বেছে নিচ্ছে। অ্যালপাইন কোয়েস্ট-এর মতো সাধারণ এক ট্রেকিং অ্যাপ এখন হয়ে উঠেছে এক ‘ডিজিটাল অস্ত্র’ (Digital Weapons)। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন জঙ্গিরা নির্ভুলভাবে পথ খুঁজে নিচ্ছে, তেমনই তারা ‘ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কার’দের সাহায্য ছাড়াও আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে।
জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা যখন বৈসরণ এলাকায় পৌঁছায়, তখন তারা পর্যটকদের থামিয়ে প্রথমে ধর্ম জানতে চায়, এরপর আচমকাই শুরু হয় গুলি-বৃষ্টি। এই নৃশংস দৃশ্যের ভিডিও এবং বিবরণ ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে শোকের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভ। সেনাবাহিনী, এনআইএ সহ একাধিক সংস্থা জঙ্গিদের ঘাঁটি চিহ্নিত করতে অভিযান জোরদার করেছে।