উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: বুধ, বৃহস্পতিবার পর শুক্রবারও ভারতের আকাশসীমায় ড্রোন ও মিসাইল হানা অব্যাহত রাখল পাকিস্তান (Pakistan Attack)। এদিন অন্ধকার নামতেই জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান এবং পাঞ্জাবে পাকিস্তানের দিক থেকে ছুটে আসতে থাকে একের পর এক ড্রোন। যদিও সেনাবাহিনীর তরফে সবকটি হামলাই প্রতিহত করা হয়েছে। জম্মুর সাম্বা, পাঠানকোট এবং ফিরোজপুর (পাঞ্জাব) এবং জয়সলমের (রাজস্থান) এ ড্রোন দেখা গেছে। বারমের এবং পোখরান সহ এই অঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। এদিন ড্রোন হামলার খবর মিলতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। প্রধানমন্ত্রীকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। এর কয়েক ঘন্টা আগে, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। কীভাবে পাকিস্তানের এই ড্রোন হামলার জবাব দেওয়া হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।
বৃহস্পতিবার রাতেও পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম সীমান্তে একগুচ্ছ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার লক্ষ্যবস্তু ছিল বেশ কয়েকটি অঞ্চল। প্রতিরক্ষা সূত্রে জানা গেছে, এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আক্রমণগুলিকে প্রতিহত করেছে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি এড়ানো গেছে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে গোলাগুলি চালিয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার ৩৬টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায় পাকিস্তান। প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়। ভারত সরকার মনে করছে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরীক্ষা করতে ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতেই এত সংখ্যায় ড্রোন হামলা চালায় পাকিস্তান। ড্রোনগুলির ধ্বংসাবশেষের ফরেনসিক তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এগুলি তুরষ্কের তৈরি ড্রোন। তুরষ্ক যা পাকিস্তানকে দিয়েছে। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার ভোরে অপারেশন সিঁদুর চালায় ভারত। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯ টি এলাকায় প্রত্যাঘাত করে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই হানায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০০ জনের। এরপর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের এই প্রত্যাঘাত মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তান। তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিল তারা। শেষ পর্যন্ত ভারতের ১৫টি শহরের সেনাছাউনি লক্ষ্য করে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায়। কিন্তু ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সেই সবকটি হামলাই ব্যার্থ করে দিয়েছে। পালটা হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের লাহোর সহ বেশ কিছু শহররের নিজস্ব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও নষ্ট করে দেয় পাকিস্তান। এরপর বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের হামলা সামলে নিয়েই রাতে তুমুল হামলা চালায় ভারত। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাকিস্তানের একাধিক শহর। কিন্তু তাতেও শুধরে যায়নি পাকিস্তান। শুক্রবারও ফের একই কায়দায় তারা হামলা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিনও নির্ভুল ভাবে সবকটি হামলাই প্রতিহত করে ভারত। জম্মু কাশ্মীরের (Jammu Kashmir) মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে জানিয়েছেন, ‘আমি যেখানে আছি সেখান থেকে মাঝে মাঝে বিস্ফোরণের শব্দ, সম্ভবত ভারী কামানের শব্দ শোনা যাচ্ছে’ তিনি অন্ধকারে শহরের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন, পোস্টটির ক্যাপশনে বলেছেন, ‘এখন জম্মুতে ব্ল্যাকআউট। শহর জুড়ে সাইরেন শোনা যাচ্ছে।’ সাধারণ মানুষের প্রতি ওমরের আবেদন, ‘জম্মু এবং তার আশেপাশের সকলের কাছে আমার আন্তরিক আবেদন, দয়া করে রাস্তা থেকে দূরে থাকুন, বাড়িতে থাকুন অথবা নিকটতম স্থানে থাকুন যেখানে আপনি আরামে থাকতে পারেন। গুজব উপেক্ষা করুন, ভিত্তিহীন বা যাচাই না করা গল্প ছড়াবেন না এবং আমরা একসাথে এটির মোকাবিলা করব।’