সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

তালপাতার হাতপাখার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা

শেষ আপডেট:

বালুরঘাট: তালপাতার হাতপাখার সঙ্গে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিল একটা সময়। তারপর বিদ্যুৎ সংযোগের প্রসার ঘটল। ক্রমশ কমতে থাকল হাতপাখার ব্যবহার। যদিও তখনও বাড়িতে বিদ্যুৎ হঠাৎ চলে গেলে সকলের হাতে উঠে আসত তালপাতার হাতপাখা। এখন সেই অবসরও কমে এসেছে। তবু বিভিন্ন মেলায় এই হাতপাখার পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন গুটিকয়েক মানুষ। তেমনি একজন চকভৃগুর প্রবীণ নাগরিক প্রভাস মহন্ত। আধুনিক যুগের নজরের আড়ালে তিনি একান্তে তৈরি করে চলছেন একের পর এক তালপাতার হাতপাখা।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় তালপাতার পাখার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নেই বললেই চলে। বর্তমানে হাতে তৈরি এই পাখার প্রচলন তেমন না থাকার ফলে নেই এই হাতপাখা তৈরির কারিগরেরাও। রাজ রাজাদের আমলে বিপুল প্রসার ঘটে এই তালপাতার হাতপাখার। তারপরে ব্রিটিশ রাজ থেকে শুরু করে জমিদারি ব্যবস্থাতে বড় বড় তালপাতার পাখার ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে ছিল। কালের আবর্তে এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী হাতপাখা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কারিগরি শিল্পের দৌরাত্ম্যে প্লাষ্টিকের হাতপাখার জনপ্রিয়তা বিস্তার লাভ করে। শহুরে মানসিকতার দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীন এই শিল্প। তবে বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের কুয়ারণ এলাকায় তালপাতার হাতপাখা তৈরি করছেন প্রবীণ কারিগর প্রভাস মহন্ত। বহু পুরনো এই পেশাটাকে ধরে রাখার জন্য এখনও হাতপাখা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিগত ৪০ বছর ধরে তিনি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কয়েক দশক আগের মতোই এখনও তাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজে সাহায্য করে চলেন তাঁর স্ত্রী।

বালুরঘাটের শিক্ষক তথা সাহিত্যিক গগন ঘোষ বলেন, ‘একসময় তালপাতার হাতপাখা ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতীক। বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ারকন্ডিশন সহ নানা ধরণের অত্যাধুনিক জিনিস বাজারে ছেয়ে যাওয়ায় চাহিদা কমেছে তালপাতার হাতপাখার। ফলে বিক্রি না হওয়ায় কারিগরেরা হাতপাখা বানানো বন্ধ করে অন্য কাজে মন দিয়েছেন। গ্রাম থেকেও উঠে গিয়েছে সারি সারি সব তালগাছ। বিশ্বায়নের প্রভাবে এই শিল্পের অবক্ষয় দুঃখের।’

চকভৃগুর বাসিন্দা তরুণ মাহাতো বলেন, ‘বর্তমানে হাতপাখার ব্যবহার না থাকায় পেশাদার কারিগররা হাতপাখা বানানো বন্ধ করেছেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে অন্য কাজে মনসংযোগ করেছেন তাঁরা। ফলে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পীসত্তা। এই হাতপাখা তৈরির জন্য নতুন প্রজন্মের কারিগর আর নেই।’

শিল্পী প্রভাস মহন্ত জানান, ‘গাছে উঠে তালপাতা, গাছের পাতলা বাকল সহ বিভিন্ন রকম সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিপদের মুখে পড়তে হয়। এমনকি বাজার দরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাত পাখার সরঞ্জামের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০টা হাতপাখা তৈরি করি। গ্রামের কিছু মানুষ এখনও তা কেনেন। কিন্তু সেই জায়গাও সংকীর্ণ হয়ে আসছে। সরকারি তরফে কোনও সাহায্য বা ভাতা পেলে এই শিল্পের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারব।’

Sushmita Ghosh
Sushmita Ghoshhttps://uttarbangasambad.com/
Sushmita Ghosh is working as Sub Editor Since 2018. Presently she is attached with Uttarbanga Sambad Digital. She is involved in Copy Editing, Uploading in website and various social media platforms.

Share post:

Popular

More like this
Related

Raiganj | শহর ঢেকেছে বিজ্ঞাপনে, সরিয়ে নেওয়ার আর্জি পুরসভার

দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: বিজ্ঞাপনী সংস্থার ফ্লেক্স-ফেস্টুনে ভরে গিয়েছে রায়গঞ্জ...

Jalpaiguri | বেহাল কাঠামো, বাজার হারাচ্ছে সরকারি সংস্থা 

পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: নজরদারির অভাবে ধুঁকছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল...

CM Mamata Banerjee | ‘২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা আমাদের জন্য চাকরি হারায়নি,’ সাফ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরবঙ্গ সফরে (North Bengal Tour)...

Hemtabad | তরুণীকে যৌন হেনস্তা! জুতোর মালা পরিয়ে শিক্ষককে গাছে বেঁধে মারার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১   

হেমতাবাদ: হেমতাবাদের একটি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষককে জুতোর মালা...