রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: পানিট্যাঙ্কিতে প্রায় সাড়ে ১১ বিঘা সরকারি জমি দখল করেছে মেচি মার্কেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। জেলা প্রশাসনের জমি জরিপে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। কিছুদিন ধরেই ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কিতে অতিরিক্ত জমি দখল করে বাজার তৈরির জন্য কোটি কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল। তার ভিত্তিতেই শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি সহ অন্য আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর জমি জরিপ করে। সেই জমি জরিপের রিপোর্টেই জমি দখলের তথ্য মিলেছে বলে সভাধিপতি অরুণ ঘোষ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আইন মেনে পদক্ষেপ করা হবে।’
পানিট্যাঙ্কিতে বারবার চা বাগানের লিজে থাকা সরকারি জমি দখল করে বাজার তৈরি হয়েছে। সেই বাজারে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক একটি প্লট বিক্রি করেছে জমি সিন্ডিকেট। এভাবে কয়েকশো কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে এই এলাকায়। বিশেষ করে সুদর্শন চা বাগানের লিজে থাকা জমিতেই বারবার দখলদারি চালিয়েছে মেচি মার্কেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। উত্তরবঙ্গ সংবাদে ধারাবাহিকভাবে এই জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ২০২০ সালে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর চা বাগানের কাছ থেকে নিয়ে মেচি মার্কেট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে ৭.৯২ একর জমি লিজ দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, লিজ বহির্ভূত আরও প্রচুর জমি দখল করে ওই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্লট করে বিক্রি করে দিয়েছে। সেখানে দোকানঘরও উঠে গিয়েছে। বারবার এই অভিযোগ ওঠার পর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মহকুমা পরিষদ ওই জমি জরিপ করায়। একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে জমি মাপা হয়। সেই রিপোর্টে প্রায় ১৩ বিঘা অতিরিক্ত জমি দখলের প্রমাণ মেলে। কিন্তু তারপরও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন।
গত জুন মাসে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি জমি দখলের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক এবং যুব সভাপতি গৌতম গোস্বামী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আসরাফ আনসারি এবং সুশীল ঘোষও। অথচ পানিট্যাঙ্কির জমি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কারও বিরুদ্ধে এখনও পদক্ষেপের সাহস দেখায়নি প্রশাসন।
গত মাসে পুনরায় এই জমি জরিপ করায় মহকুমা পরিষদ। মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ, ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কিশোরীমোহন সিংহ সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের উপস্থিতিতে জমি মাপা হয়েছিল। সেই জমি জরিপের রিপোর্টও জেলা প্রশাসন এবং মহকুমা পরিষদে জমা পড়েছে। সেখানে লিজ বহির্ভূত সাড়ে ১১ বিঘা জমি দখলের কথা লেখা হয়েছে। কিন্তু সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরও প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের বক্তব্য, ‘বহুদিন ধরে পানিট্যাঙ্কির জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগ উঠছে। মেচি মার্কেট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে তৃণমূল, সিপিএম সহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও যুক্ত। অথচ সরকারি জমি দখল করে কোটি কোটি টাকা লুটের প্রমাণ মিললেও একজনের বিরুদ্ধেও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।’ এব্যাপারে প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া জানতে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রামকুমার তামাংকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে প্রশাসন কী ভাবছে, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে জনমানসে।