মেখলিগঞ্জ: বাম আমল থেকেই কৃষিনির্ভর মেখলিগঞ্জে হিমঘরের দাবি ছিল। আজও সেই দাবি পূরণ হয়নি। জয়ী সেতু তৈরি হওয়ার পর তিস্তা চরের প্রায় ৪০০ একর খাসজমিতে শিল্পতালুক তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সেই জমি এখনও দখলমুক্ত করা যায়নি। স্বাভাবিকভাবে শিল্পতালুক তৈরির পরিকল্পনা যেমন অধরা রয়ে গিয়েছে তেমনি তিনবিঘা করিডরকে কেন্দ্র করে পর্যটন হাব তৈরির স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে কুচলিবাড়িবাসীর৷ দল বদল করে এসে পরেশ অধিকারী মেখলিগঞ্জে নানা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বাস্তবে সেই উন্নয়নে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি পরেশ।
মেখলিগঞ্জের বিধায়ক পরেশ বাম আমলে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। বামের দাপুটে নেতা ২০১৮ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলে এসেও হয়েছেন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। মিলেছে চ্যাংরাবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের পদও। উন্নয়নের স্বার্থে দল পরিবর্তন করলেও প্রথমেই মেয়ের চাকরি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অভিযোগ ওঠে মেধাতালিকায় নাম না থাকলেও হঠাৎ এসএসসি-র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে তপশিলি তালিকার ওয়েটিং লিস্টে প্রথমে চলে আসে তাঁর মেয়ের নাম। আবার পরবর্তীতে চাকরিও পান। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, বাম আমলেও পরিবারের এমন কেউ নেই যিনি চাকরি পাননি। অবশ্য সেই সময় অভিযোগ ওঠেনি। কিন্তু তৃণমূলের আমলে নিজের মেয়ে অঙ্কিতার চাকরি ও তারপর পদচ্যুত হওয়া একে একে প্রকাশ্যে আসে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের চাকরির তালিকা। তবে মেয়ের চাকরি বিতর্কই কাল হয়ে দাঁড়ায় রাজনৈতিক জীবনে। মন্ত্রিত্বও চলে যায়। ঘরে-বাইরে কটাক্ষের মুখে পড়েন তিনি। উন্নয়নের জন্য দল পরিবর্তন করলেও মেখলিগঞ্জের জয়ী সংলগ্ন এলাকায় শিল্পতালুক থেকে বেশ কয়েকটি সেতু সংস্কার, কৃষকদের জন্য হিমঘর, সেচের ব্যবস্থা এখনও অধরা। মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের দাবিও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন পরেশ। তবে নানা অভিযোগ থেকে শুরু করে মেয়ের চাকরি কেলেঙ্কারিতে সিবিআই–ইডির টানাহ্যাঁচড়া থেকে একমাত্র ছেলের অকালপ্রয়াণ। তবে দমে যাননি তিনি। এসবের মাঝেও প্রতিশ্রুতি পূরণে একেবারে তাঁকে বাদ দেওয়ার খাতায় রাখা যায় না।
মেখলিগঞ্জ বিধানসভার কোনায় কোনায় প্রত্যেক গ্রাম থেকে শুরু করে পুরসভাতেও চ্যাংরাবান্ধা উন্নয়ন পর্ষদ ও বিধায়ক তহবিল থেকে পাকা রাস্তা ও কালভার্ট করেছেন। মেখলিগঞ্জ পুরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডে রাস্তা, ড্রেন থেকে বেশ কয়েকটি স্কুলের সীমানা পাঁচিল থেকে শৌচাগার, সাইকেলস্ট্যান্ড তৈরি করেছেন৷ মেখলিগঞ্জ কলেজের সীমানা পাঁচিল, শৌচাগার এবং মেখলিগঞ্জ মহকুমা আদালত সংস্কারেও হাত লাগিয়েছেন তিনি। বিধায়ক তহবিল থেকে তৈরি করেছেন রানিরহাটে সেতু৷ মেখলিগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফির ব্যবস্থা করেছেন। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনের উদ্বোধন হবে শীঘ্রই। পাশাপাশি পরেশের তত্ত্বাবধানে মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়িতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে পোলট্রি ফার্ম। পরেশের বক্তব্য, ‘মেখলিগঞ্জ বিধানসভাজুড়েই উন্নয়ন করা হয়েছে।’ হিমঘর ও মেখলিগঞ্জের জয়ী সেতু সংলগ্ন শিল্পতালুক নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘জামালদহ সংলগ্ন এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে একটি হিমঘর তৈরি হচ্ছে। একটি বহুমুখী হিমঘর করার চেষ্টা চলছে। আর জয়ী সেতু সংলগ্ন প্রায় ৪০০ একর খাসজমি দখলমুক্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। সেখানেই শিল্পতালুক হবে।’