সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

Paris Olympic | স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাননি স্বপ্নিল, পদক জিতেও এগিয়ে রাখলেন অঞ্জলি-সুমাকে

শেষ আপডেট:

সুস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায়, প্যারিস: সকালে স্যাটোহুর শুটিং রেঞ্জে আসার সময় এক কাপ লাল চা ছাড়া আর কিছুই খাননি তিনি। নিজেই জানাচ্ছেন, তখন পেট গুড়গুড় করছিল প্রচণ্ড।

অত্যন্ত সাদামাঠা চালচলন এবং কথাবার্তায় তাঁকে দেখে কে বলবে, খানিক আগেই দেশের জন্য গর্বের পদক নিয়ে এসেছেন স্বপ্নিল কুসালে। ইংরেজিতে খুব একটা সড়োগড়ো নন ভারতের তৃতীয় পদক জয়ী এই শুটার। তাই মিক্সড জোনে এসে যা বলার সবটাই বললেন হিন্দিতে। নিজের ইভেন্টের কথা বলতে গিয়ে সোজাসাপটা স্বপ্নিল, ‘দেখুন অলিম্পিকের ফাইনাল খেলতে নামছেন, হার্ট বিট তো এমনিই বেড়ে যাবে। সবার যায়। আমারও একই অবস্থা হয়েছে। শুধু নিজের কাজের দিকে ফোকাস করেছিলাম। আর নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করি। ব্যস এটাই একমাত্র বিষয় বলার মতো।’ এর আগে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পদকের মুখ থেকে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। স্বপ্নিল তাই পদকের কথাই ভাবেননি। শুধু নিজের সেরাটা দিতে হবে, এটাই মাথায় ছিল তাঁর। পদক জয়ের পর তাই বলেছেন, ‘কিছু ভাবিইনি আজ আমি। শুধু নিজের মাথা ঠান্ডা ও শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে গিয়েছি। যাতে পুরো ফোকাস শুটিংয়ে দিতে পারি।’

 যখন তিনি পদকের জন্য লড়ছেন তখনও স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাননি বলে দাবি তাঁর। কীভাবে এক পয়েন্ট কভার করে রুপো জয়ের চেষ্টা করে যাবেন, এটা ভেবেছিলেন কিনা জানতে চাইলে স্বপ্নিলের জবাব, ‘সত্যি কথা বলতে কী, আমি স্কোরবোর্ডের দিকে তাকাইনি। বরং এত বছরের পরিশ্রমকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটাই ভাবছিলাম, কে কত স্কোরে দাঁড়িয়ে এসব নিয়ে ভাবার মতো মানসিকতা তখন ছিল না। নিজের উপর বিশ্বাস ছিল। মাইকের ঘোষণার দিকেও মন দিইনি। নিজেকে বলছিলাম, ওসব নিয়ে একেবারেই ভাবা চলবে না। আমার পিছনে থাকা সারা ভারতের চিৎকার আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওঁদের আমি আনন্দ করতে দেখতে চাই। সেটা আমার কাছে অনেক বেশি জরুরি। এখানে দর্শকাসনের ভারতীয়রা যে চিৎকার করছিলেন, সেটার অনুভূতিই তাতিয়ে তোলে।’ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কথা বা অন্য কোনওকিছুই মাথায় রাখতে নারাজ স্বপ্নিল। বলে দেন, ‘কী হয়েছে না হয়েছে সেটা নিয়ে ভাবি না। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করি। যা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। পদক পেলাম। এবার ভুলে গিয়ে সামনের দিকে তাকাতে হবে।’

এখানেও স্বপ্নিল ও ঐশ্বর্যপ্রতাপ সিং তোমার ফেভারিট হিসাবে আসেননি। বলতে গেলে তাঁদের কেউই প্রায় ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। একথা স্বীকার করে নিয়ে নারাংও বলেন, ‘শুটিং দলের মধ্যে স্বপ্নিল ও ঐশ্বর্য আন্ডারডগ হিসাবেই এসেছিল। কেউই ওদের নিয়ে ভাবেনি। কিন্তু আমি জানতাম, এদের মধ্যে একটা বিশেষত্ব আছে। ঐশ্বর্য ভালোই করেছে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফাইনালে যেতে পারেনি, যা স্বপ্নিল পেরেছে। সবসময়ই নিজেকে প্রচারের আলো থেকে দূরে রেখেছে। কঠোর পরিশ্রম করে, যে কোনও রকম বাইরের আকর্ষণ থেকে নিজেকে দূরে রাখে। সত্যি বলতে কী, ওর এই পদকটা সোনার থেকেও দামি।’ এদিন শুটিং রেঞ্জে আসার আগে পুজো করেন। মায়ের শেখানো মন্ত্র উচ্চারণ করেই আসেন। তবে আলাদা করে কোনও ভগবানের নাম আর পরে জানাতে রাজি হননি।

তিনিই প্রথম মারাঠি হিসাবে অলিম্পিক পদক পেলেন। তবু স্বপ্নিল নিজের থেকেও এগিয়ে রাখছেন অঞ্জলি ভাগবত ও সুমা শিরুরকে। এই প্রশ্ন করলে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সদ্য পদকজয়ীর বক্তব্য, ‘ওঁদের সঙ্গে আমার তুলনা করবেন না। কে পদক জিতেছেন, সেটা বড় কথা নয়। ওঁরা কিন্তু কিংবদন্তি। আর আমার কোচ দীপালি ম্যাম (দেশপান্ডে) আমার কাছে দ্বিতীয় মায়ের সমান।’ নিজের মা, এই দ্বিতীয় মা ও এখানকার কোচিং দলের সমর্থন ও পরিশ্রমের জন্যই আজ তাঁর সাফল্য, বারবার এই কথাই বলে গেলেন স্বপ্নিল।

Sandip Sarkar
Sandip Sarkarhttps://uttarbangasambad.com/
Sandip Sarkar Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 22 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

ICC Champions Trophy | দুবাই বিতর্কে রোহিতদের পাশে ম্যাকগ্রাথও, তিনটি পৃথক দল নামাতে পারে ভারত : স্টার্ক

নয়াদিল্লি: একই দিনে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আলাদা...

IPL 2025 | কোহলি পা রাখতেই চনমনে আরসিবি, পাশে আছি, অধিনায়ক অক্ষরকে শুভেচ্ছা লোকেশের

নয়াদিল্লি: জল্পনা ছিল। ব্যতিক্রম কিছু হল না। দিল্লি ক্যাপিটালসের...

Varun Chakravarthy | ২০২১ টি২০ বিশ্বকাপের পর হুমকি ফোন পেয়েছিলেন বরুণ

কলকাতাঃ জীবনটা আচমকা বদলে গিয়েছে। দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযানে...

Rohit Sharma | ইংল্যান্ড সফরেও আস্থা রোহিতে, অবসর নিয়ে বড় ইঙ্গিত কোহলির

নয়াদিল্লি: ভারতীয় দলের জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার পর এবার...