গৌরহরি দাস, কোচবিহার : আর্থিক সমস্যা মেটাতে কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লকের পর এবারে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)-ও তাদের জেলা কার্যালয় ভাড়া দিল। সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়ের দোতলা ভবনটির নীচতলাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়েই কার্যালয়ের একটি অংশ ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে দলের জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয় ভাড়া দেওয়ার খবরে কোচবিহারের রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।
কোচবিহারে সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক পার্থপ্রতিম সরকার বলেন, ‘কার্যালয়ের একটি অংশ ভাড়া দেওয়ার পিছনে আর্থিক সমস্যা অবশ্যই একটি বড় কারণ। পাশাপাশি, কার্যালয়ের ওই ঘরগুলি সেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল না। ওই ঘরগুলি যাতে ঠিকমতো থাকে, সেজন্যও সেগুলি ভাড়া দেওয়ায় আরেকটি কারণ। দলের রাজ্যের অনুমোদন নিয়েই গত মাসে আমরা এই ভাড়া দিয়েছি।’ দলীয় সূত্রে খবর, কার্যালয়ের নীচতলাটি দুজনকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
কোচবিহার শহরের ঐতিহ্যবাহী বড়োদেবী তথা দেবীবাড়ি মন্দির সংলগ্ন তোর্ষা নদীর বাঁধের ধারে সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়টি রয়েছে। কোচবিহারে সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়টির নাম দেবী নিয়োগী ভবন। বছর তিরিশেক আগে সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয়টি শহরের বিশ্বসিংহ রোডে ছিল। ১৯৯৯ সালে তোর্ষা নদীর বাঁধের ধারে সিপিআইয়ের েজলা কার্যালয়টি তৈরি করা হয়। গত ২৫ বছর ধরে এই জেলা কার্যালয় থেকেই সিপিআইয়ের সমস্ত দলীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হত। কার্যালয়টিতে এখনও মাঝেমধ্যে দলীয় কর্মীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
একটা সময় জেলায় দলের কর্মী সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ছিল। কর্মীদের কাছ থেকে তাঁদের আয়ের এক শতাংশ লেভি হিসাবে নেওয়া হত। তাতে মাসে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা উঠত। আর তা দিয়েই দল পরিচালনা হত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে দলের কর্মী সংখ্যাও এখন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কর্মীদের দেওয়া লেভি বাবদ মাসিক আয়ের পরিমাণ বর্তমানে অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। এতে দল পরিচালনা করার বিষয়টি খুবই সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই দলের জেলা কার্যালয়টির দোতলা ভবনটির নীচতলাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
সমস্যার কারণে বামেদের অন্যতম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকও বছর খানেক আগে কোচবিহারে তাদের জেলা কার্যালয়ের নীচের অংশটি ভাড়া দিয়েছে। এবার বামেদের অন্যতম শরিক সিপিআইও একই পথে হাঁটল। সিপিআইয়ের জেলা কার্যালয় ভাড়া দেওয়া নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সভাপতি দীপক সরকার বললেন, ‘বামপন্থী দলগুলি আর্থিক সংকটে ভুগছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। সেই কারণে দল চালাতেই এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়কে প্রশ্ন করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘ওরা আমাদের শরিক হলেও জেলা কার্যালয় ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি ওদের দলীয় ব্যাপার। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’