তনয়কুমার মিশ্র ও পঙ্কজ মহন্ত, মালদা ও বালুরঘাট: রাস্তায় বেরোলেই সঙ্গ দেয় তারা। ভালোবেসে একটু বিস্কুট দিলেই চিনে রাখবে আমরণ। হ্যা খানিকটা এরকমই হয় সারমেয়দের ভালোবাসা। অথচ তাদের হয়ে ভাবার মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। অবলা এই প্রাণীগুলি সমস্যার কথা মুখ ফুটে বলতেও পারে না। আর সেকারণেই তাদের অসুস্থতা যখন বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়, তখনই তা নজরে আসে। কিন্তু তাতে কি! ওদের কিছু হলে কিই বা আসে যায়! আর তা সে অসচেতনতা হোক বা ডোন্ট কেয়ার মনোভাব ইতিমধ্যেই মহামারির আকার নিয়েছে ক্যানাইন পার্ভোভাইরাস (Parvovirus), হিমোপ্রোটোজোয়া এবং ক্যানাইন ডিস্টেম্পার।
মালদায় হিমোপ্রোটোজোয়ায় আক্রান্ত পথকুকুরদের সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুও হচ্ছে বহু কুকুরের। দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কায় আতঙ্কে আদরের পোষ্যকে নিয়ে সরকারি পশু চিকিৎসালয়ে ভিড় বাড়াচ্ছে পশুপ্রেমীরা। অথচ প্রশাসনের কাছে আক্রান্ত পথকুকুরদের আলাদা করে কোনও হিসেব নেই।
পশুপ্রেমী কিছু সংগঠন ও গবেষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মালদায় অসুস্থ কুকুরের টেস্ট রিপোর্টে ৯৫ শতাংশ পজিটিভ আসছে। গত একমাসে শতাধিক কুকুরের মৃত্যুও হয়েছে এই অসুখে।
পশু চিকিৎসক হালিম সরকারের কথায়, ‘হিমোপ্রোটোজোয়ার আক্রমণে ‘ক্যানাইন বেবেসিওসিস’ এবং ‘এর লিচিওসিস’ রোগ হয়। প্রোটোজোয়া বাহক ‘টিক’ থেকে হিমোপ্রোটোজোয়া বংশবিস্তার করে। বাহক টিক সারমেয়র গায়ে বসে কামড় দিলে আক্রান্ত হয় সেই কুকুর। কুকুরের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে সেই বাহক টিক।
পশু গবেষক স্বরূপ চট্টপাধ্যায়ের মতে ‘এই অসুখের ফলে কুকুরের শরীরের লোহিতকণিকা নষ্ট হয়। প্লেটলেট কমে অ্যানিমিয়া হয়। নষ্ট হতে থাকে শ্বেত রক্ত কণিকাও। কমে যায় ইমিউনিটি। এবং মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে সেই সারমেয়।’
পশুপ্রেমী অঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘পথকুকুরদের জন্য পুরসভার আলাদা করে ভাবা উচিত।’
পাশাপাশি, মারাত্মক ছোঁয়াচে ক্যানাইন পার্ভোভাইরাস ও ডিস্টেম্পার অসুখ বালুরঘাটের পথকুকুরদের মধ্যে মহামারির আকার ধারণ করছে। কিন্তু এই রোগের টিকা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই পুরো জেলায়। এমনকি হিমোপ্রোটোজোয়া রোগে আক্রান্ত সারমেয়দের সংখ্যাও প্রচুর। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় নির্দিষ্ট চিকিৎসা হচ্ছে না। অনবরত লালাক্ষরণ ও রক্তাল্পতাই বর্তমানে ভুগছে অসহায় সারমেয়’র দল। শহরের উত্তর চকভবানী, উত্তমাশা, সংকেতপাড়া ও ২ নম্বর ওয়ার্ড সহ একাধিক জায়গায় পথকুকুররা এই ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এই ভাইরাল রোগ একবার কুকুরদের হলে সারিয়ে ওঠার মতো তেমন ওষুধ এখানে নেই। যে ওষুধ আছে তা পাওয়া মুশকিল ও তার দামও প্রচুর। ফলে এই রোগে আক্রান্ত কুকুরদের স্যালাইন দেওয়া ও কিছু ওষুধপত্র দিয়েই বাঁচিয়ে রাখছেন পশুপ্রেমীরা। যদিও বাড়িতে পোষ্য কুকুরদের দুমাস বয়সেই এই রোগের হাত থেকে বাঁচতে টিকা দেন মালিকরা। কিন্তু এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না অসহায় পথকুকুরের দল। কারণ এই টিকার মূল্য প্রায় ৮০০ টাকা।
পথকুকুরদের সেবা করছেন নালন্দা স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমিত দাস। তিনি জানান, ‘পার্ভোভাইরাস কুকুরদের অন্ত্রে ফুটো করে দেয়। ফলে রক্তপাত হয়। প্রচুর কুকুর এই ভাইরাসে আক্রান্ত। আমরা তাদের অ্যান্টিবায়োটিক, স্যালাইন সহ চিকিৎসা করছি। সঠিক চিকিৎসা পেলে এই পথকুকুররা সেরে উঠবে।’
বাংলাদেশের তারকা ল্যাব্রাডর সন্টুর আকস্মিক মৃত্যুতে শোক আর আবেগের ঝড় উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। হিমোপ্রোটোজোয়া নামক পরজীবীর আক্রমণেই মৃত্যু হয় সন্টুর।