অনুপ সাহা, ওদলাবাড়ি: যা ঘটল তা যেন সিনেমাকে মনে করাবে। মনুষ্যত্বেও বিশ্বাস ফেরাবে। রতন সূত্রধর হ্যামিল্টনগঞ্জের সার্কাস ময়দান এলাকার বাসিন্দা। ইদানীং রাঙ্গালিবাজনার (Rangalibazna) সূত্রধরপাড়ায় বসবাস। শুক্রবার শিলিগুড়ি (Siliguri) থেকে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস (Intercity Express) চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। সন্ধ্যা নামার আগে ট্রেন যখন ওদলাবাড়ির (Oodlabari) ঘিস নদীর (Ghish River) রেলসেতু পেরোচ্ছে রতন তখন ট্রেনের কামরার খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি খাচ্ছেন। এই সেতুতে কোনও গার্ডওয়াল নেই। হঠাৎই পা পিছলে রতন সোজা নদীতে পড়ে তীব্র জলস্রোতে ভেসে যেতে শুরু করেন। ঘিস কলোনির দুই তরুণ মহম্মদ ফারুক এবং মহম্মদ রমজান সেই সময় নদীপাড়েই ছিলেন। ঠিক কী ঘটেছে তা ট্রেনযাত্রীদের তুমুল চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে তাঁরা কয়েক মুহূর্তেই টের পান। দেরি না করে দুজনেই নদীতে ঝাঁপ দেন। বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় রতনকে উদ্ধার করে তাঁরা পাড়ে তুলে আনেন।
খবর ছড়ানোর পর থেকেই জীবনের জয়গান শুরু হয়েছে। ফ্ল্যাশব্যাকে ২০২২ সালের দশমীর রাত। মাল নদীতে হড়পায় অনেকে ভেসে গিয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন মারা যান। তেশিমলার মহম্মদ মানিক, সোনগাছি চা বাগানের মনোজ ওরাওঁ, শালবাড়ির তরিফুল ইসলামরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে বেশ কয়েকজনকে বাঁচিয়েছিলেন। নইলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ত। শুক্রবার রাতের পর থেকে মহমম্দ মানিকদের মতোই মহম্মদ ফারুক ও মহম্মদ রমজানও হিরোর আসনে। এলাকার দুই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সাইনুল হক ও মহম্মদ আলাউদ্দিন ফারুক–রমজানকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শুরু করে শনিবার দিনভর সেই প্রশংসাপর্ব থাকল বহাল। সবার এত প্রশংসায় দুই তরুণ যেন লাজে লাল।
রতনকে উদ্ধার করার পর সাইনুলরা তাঁকে স্থানীয় একটি ধাবায় নিয়ে গিয়ে তাঁর সেবাশুশ্রূষা করেন। কিছু খাবার খাওয়ান। তারপর পুলিশে খবর দেন। মাল থানার পুলিশ পরে রতনকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেয়। ঠিক কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে তদন্তকারীরা নিশ্চিত নন। রতন অবশ্য একটি বিষয়ে নিশ্চিত, ট্রেনের কামরায় খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে তিনি আর কখনও ঝালমুড়ি খাবেন না।