বালুরঘাট: কুঁড়ে ঘরেই দিনযাপন। একটি মাত্র ঘরের দরজাও মাটিতে কার্যত ধসে গিয়েছে। সেই দরজা বন্ধ করার উপায় নেই। দিনরাত্রি হাট করেই খোলা থাকে। ঘরে মাথার উপরে চালের টিন শতছিদ্র। ছাদের ফাঁক দিয়ে চাঁদ এসে উঁকি দেয়। বর্ষায় ঘরে থাকার উপায় নেই। বালুরঘাট (Balurghat) শহরের ছিন্নমস্তা পল্লী এলাকার এক বৃদ্ধার করুন অবস্থা দেখে সম্পূর্ণ ঘর তৈরি করে দিল পথের দিশা ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। বুধবার রাতে সেখানে গৃহপ্রবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। সকলকে মিষ্টিমুখ করিয়ে নতুন বাড়ি বৃদ্ধাকে উপহার দেন তারা। যা নিয়ে কার্যত শহরবাসীর প্রশংসা কুরোচ্ছেন সংস্থার সদস্যরা।
পথের দিশার জন্ম লগ্ন থেকেই রক্তদান নিয়ে কাজ করার লক্ষ্য স্থির হয়। তারা প্রতিবছর উত্তরবঙ্গে প্রথম রক্তদান উৎসব আয়োজন করে। যেখানে প্রায় ২০০ জন রক্তদান করেন। রাতবিরেতে কখনো মালদা, শিলিগুড়ি তো কখনো কলকাতা ছুটে গিয়ে মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচান তারা। কিন্তু রক্তের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের তিনটি মৌলিক চাহিদার দিকে তারা পরবর্তীতে নজর দিয়েছেন। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান। বছরের বিভিন্ন সময় তারা অভাবী মানুষদের মুখে অন্ন তুলে দেন। সমাজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে, অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধসহ জন্মদিনে ভুরিভোজের আয়োজন থাকে। সেখানে অনেক সময় প্রচুর খাবার বেঁচে যায়। তারা সেই খাবার নিরন্ন মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। পুজোর আগে নতুন জামার পাশাপাশি প্রচুর মানুষের কাছ থেকে পুরনো জামা সংগ্রহ করে জেলাজুড়ে তা পৌঁছে দেন দুস্থদের কাছে। এবার অন্যতম মৌলিক চাহিদা বাসস্থানের দিকে নজর দিয়েছে তারা। গত শীতে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচাতে ছিন্নমস্তা পল্লীর বকুল মহন্তের কাছে শীত বস্ত্র নিয়ে যান সংস্থার সদস্যরা। তখনই ওই বৃদ্ধার আশ্রয়ের দুর্দশা নজরে পড়ে তাদের। বহুবার সরকারি ঘরের আবেদন করেও কাগজপত্রের সমস্যার জন্য তা মেলেনি। তখনই সিদ্ধান্ত নেন এবার ‘আশ্রয়ের দিশা’ প্রয়োজন। তারপর থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে আবেদন রেখে তারা অর্থ সংগ্রহ করে ওই বৃদ্ধার বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। মাথা গোঁজার সঠিক আশ্রয় পেয়ে দুহাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন ওই অশীতিপর বৃদ্ধা।
উপকৃত এই বৃদ্ধা জানান, ‘ওরা সকলেই নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়ে। এভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়াবে বুঝতে পারিনি। আমাকে কোথাও যেতে হয়নি। তারাই বাড়ি এসে সমস্ত আয়োজন করেছেন। ঘরের জন্য নতুন টিন,কাঠ, বাঁশ সমস্ত কিছুই তারা কিনে দিয়েছেন। এমনকি মিস্ত্রির মজুরিও তাদের দেওয়া। এবার বর্ষায় নিশ্চিন্তে থাকা যাবে। শীতের হাত থেকেও রেহাই পাব।’
পথের দিশা সংস্থার তরফে মান্না সরকার জানান, ‘সংস্থার সদস্য সহ প্রচুর মানুষের সাহায্যে এই ঘর তৈরি। বন্ধুরা একত্রিত হয়ে এদিন রাতে ওই বৃদ্ধাকে নতুন ঘর উপহার দিতে পেরেছি। আশ্রয়ের দিশা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।’