শুভাশিস বসাক, ধূপগুড়ি: জ্বরের চিকিৎসা করাতে ধূপগুড়ি (Dhupguri) মহকুমা হাসপাতালের আউটডোরে গিয়েছিলেন বছর ষাটেকের ইন্দ্রজিৎ মহন্ত। সবে ডাক্তারবাবুকে দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বেরিয়েছেন। কিছু বোঝার আগেই কোথা থেকে একজন হাত থেকে প্রেসক্রিপশন ছিনিয়ে নিলেন। সঙ্গে ভারী গলায় নির্দেশ, চলে আসুন আমার সঙ্গে। সস্তায় ওষুধের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিছুটা হকচকিয়ে যান ইন্দ্রজিৎবাবু। সঙ্গে থাকা ছেলে ঋজু তখন সেই ব্যক্তির পিছনে ছুটেছে। প্রেসক্রিপশন উদ্ধার করতে। রীতিমতো কথা কাটাকাটির পর ঋজু সেই প্রেসক্রিপশন ফেরত আনেন।
একা ইন্দ্রজিৎবাবু নন, ধূপগুড়ি হাসপাতালে এসে এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে অনেক রোগী ও তাঁর পরিবারের। অনেকে বলেন, মহকুমা হাসপাতাল হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা যত বেড়েছে তার থেকে বেশি বেড়েছে হাসপাতালের বাইরে ওষুধের দোকান। আর তাদের দালালরা হাসপাতালে রামরাজত্ব চালাচ্ছে। কোনও প্যাথলজিকাল পরীক্ষার কথা প্রেসক্রিপশনে লেখা থাকলে তো আর রেহাই নেই। এমনকি ওযুধ কিনতেও জোরাজুরি করা হচ্ছে।
ইন্দ্রজিৎবাবুর ছেলে ঋজু বলেন, ‘হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর পর একজন ছুটে এসে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিল। এটা শুধু আমার সঙ্গে নয়, আরও রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে হচ্ছে।’ একই কথা বলেন আরেক রোগীর আত্মীয় উজ্জ্বল মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে কেন আসছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কোনও রোগী কোন দোকান থেকে ওষুধ কিনবেন, তা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ওষুধের দোকানের কর্মীরা হাসপাতালে ঢুকে দালালচক্র চালাবে, এটা কেমন ব্যাপার?’
হাসপাতালে দালালচক্র নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন চিকিৎসকরাও। বারবার দালালদের বের করে দেওয়া হলেও তারা ফের হাসপাতালে ঢুকছে। ধূপগুড়ির বিএমওএইচ ডাঃ অঙ্কুর চক্রবর্তী বলেন, ‘ওষুধের দোকানের কর্মীরা হাসপাতালে ঢুকে রোগীর পরিবারকে নিজেদের দোকানে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন ঘটনা ঘটছে। কর্মীদের বলা হয়েছে, তাদের হাসপাতাল চত্বরে দেখামাত্র যেন বের করে দেওয়া হয়।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কড়াকড়িকে অবশ্য ওযুধের দোকানের দালালরা বিশেষ পাত্তা দেন না। এর আগেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওষুধের দোকানের দালালদের হাসপাতালে ঢোকায় কড়াকড়ি করেছিল। তখন অভিযান হওয়ায় ওই দালালদের রমরমাও কমেছিল। সেই অভিযান আর নিয়মিত না হওয়ায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালরা।
হাসপাতাল চত্বরেই রয়েছে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান। তার কিছুটা দূরেও দালালদের পাহারা রয়েছে। তাদের বলে দেওয়া ওযুধের দোকানে কেউ না গিয়ে ন্যায্যমূল্যের দোকানে যেতে চাইলে তাঁকে ‘পরামর্শ’ দিচ্ছে দালালরা। বলা হচ্ছে, ওই ওষুধে কাজ হবে না। অথবা, এই ওষুধ ওই দোকানে পাবেন না।
রোগীদের একান্ত আর্জি, দালালদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। না হলে হাসপাতালে এসেও গরিবদের স্বস্তি মিলবে না। বিসিডিএ-র জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সুদীপ্ত সাহা অবশ্য বলেন, ‘হাসপাতালে দালালচক্র বরদাস্ত করা হবে না। এই ধরনের কোনও অভিযোগ আসেনি। এই ধরনের প্রতিযোগিতা বন্ধ করে হাসপাতালে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়া প্রয়োজন।’