পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গলে আগুন লাগার পর থেকে ময়ূরের আস্তানা হয়ে উঠেছে ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান (Danguajhar Tea Garden)। এতদিন সেই ময়ূরদের যাতে ক্ষতি না হয়, সেদিকে নজর রেখেছিল বাগান কর্তৃপক্ষ আর বাগিচা শ্রমিকরা। এবার সেই ময়ূররা ডিম পাড়ায় তাঁদের ব্যবস্থা আরও বেড়েছে। বাগানে আসা বাঁদর আর কুকুরের দল ময়ূরের ডিম নষ্ট করতে পারে, এই আশঙ্কায় বাগান কর্তৃপক্ষ এখন যেসব জায়গায় ময়ূররা ডিম পেড়েছে সেখানে চৌকিদার মোতায়েন করেছে। নজর রাখছেন সেকশনে কাজ করা বাগিচা শ্রমিকরাও। তবে বন দপ্তরের এখনও পা পড়েনি ওই বাগানে। কেন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ময়ূররা চা বাগানে আশ্রয় নিয়েছে বা সেখানে ডিম পাড়ছে, তা খতিয়ে দেখতে সেখানে যাননি বন দপ্তরের কোনও কর্তা।
এমনিতে বছরভর চিতাবাঘের সঙ্গে কাটাতে হয় এই বাগানের শ্রমিকদের। চা ঝোপের আড়ালে মা চিতাবাঘ প্রসব করে। সেই সময় ধারেকাছে কোনও শ্রমিক চলে গেলে তার উপর আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু ময়ূরের দলকে দেখে চিতাবাঘরাও এখন বাগানে আসছে না। ফলে শ্রমিকরাও নিশ্চিন্তে কাজ করছেন বাগানে। বন্যপ্রাণের সঙ্গে এই সহাবস্থান থেকেই ময়ূরদের কার্যত আগলে রাখছেন বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকরা। বাগানের শ্রমিকদের ধারণা, অন্তত ৩০০ ময়ূর আশ্রয় নিয়েছে বাগানে। বৃষ্টি পড়লে তারা পেখম মেলছে বাগানের সবুজ গালিচায়। আর তা দেখতে শহর থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।
জলপাইগুড়ি শহর থেকে ৬ কিমি দূরে ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান। চা বাগানের শ্রমিক রোহিত রোশন তিরকি বলেন, ‘প্রতিদিন বাগানে পাতা তুলতে গেলেই ময়ূরের দলকে দেখা যাচ্ছে। চা গাছের নীচে ডিম পেড়েছে ওরা। আমরাও নজর রাখছি ডিম যাতে বাঁদর তুলে না নিয়ে যায়। কুকুর এসেও ডিম ভেঙে খেয়ে নিচ্ছে। সকাল-বিকেল-সন্ধ্যায় বাগানে ময়ূরদের আনাগোনা লেগেই আছে। শহর থেকে অনেক মানুষ আসছেন ময়ূর দেখতে।
চা শ্রমিক রতুয়া ওরাওঁ বলেন, এখন চা গাছের ফাঁকে চিতাবাঘ নেই। ময়ূরের জন্য নির্বিঘ্নে কাজ করা যাচ্ছে। মাঝে বৃষ্টি হয়েছিল, তখন ময়ূরের নাচ দেখেছি। চা গাছের নীচে ডিম পেড়ে গাছের পাতা দিয়ে ঢেকে রাখছে ওরা। এসব দেখতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন চা বাগানে।
ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার দীপক শর্মা জানান, ‘প্রায় তিনশোর মতো ময়ূর আশ্রয় নিয়েছে চা বাগানের সর্বত্র। কিন্তু ময়ূরের ডিম বাঁদর ও কুকুর এসে ভেঙে খেয়ে নিচ্ছিল, নষ্ট করে দিচ্ছিল। তাই আমরা ময়ূরের ডিম রক্ষা করার জন্য চৌকিদারদের নির্দেশ দিয়েছি পাহারা দেওয়ার জন্য। শহরের থেকেও অনেকে ময়ূর দেখতে আসছেন। আমরা বলেছি, ময়ূরদের কোনওভাবে বিরক্ত না করে দেখুন, ছবি করুন।’ চা পর্যটনে ময়ূরের দল নতুন দিশা দেখাবে বলে তিনি মনে করেন।
গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন বলেন, ময়ূরের উপর অত্যাচার বা শিকার করার চেষ্টা করা হলে সেটা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের আওতায় পড়বে। ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের পাশে বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চল। আমাদের খবর দিলে অবশ্যই আমরা দেখব।’ বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের ডিএফও এম রাজা বলেন, ‘জঙ্গল এলাকার বাইরে চা বাগানের গাছের নীচে ঠান্ডা পরিবেশ এলাকা ময়ূরের ডিম পাড়ার আদর্শ জায়গা। হয়তো জঙ্গল এলাকা থেকেই ময়ূর ওই চা বাগানে সাময়িক আশ্রয় নিয়েছে ডিম পাড়ার জন্য। আমাদের নজরদারি রয়েছে। কোথায় কোনওভাবে ময়ূরকে উত্ত্যক্ত করার খবর পেলে অবশ্যই বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’