ময়নাগুড়ি: জল প্রবল স্রোতে বয়ে চললেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতি বছরই তিস্তা থেকে কাঠ সংগ্রহের কাজ চলে। বহু মানুষ তিস্তার সড়কসেতু ও রেলসেতুর ওপর থেকে দড়ি ঝুলিয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। নদীতে ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি, কাঠের টুকরো প্রভৃতি সংগ্রহ করা হয়। অত্যন্ত বিপজ্জনক এই প্রবণতা বন্ধ করতে ময়নাগুড়ি ব্লক প্রশাসন এবারে উদ্যোগী হল। এবছর বর্ষার সময় তিস্তার দুটি সড়কসেতুই হোক বা রেলসেতু, কোনও জায়গা থেকেই বিপজ্জনকভাবে দড়ি বেঁধে কাঠ সংগ্রহ করতে দেওয়া হবে না বলে প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন।
ময়নাগুড়ি থানার আইসি সুবল ঘোষ বলেন, ‘নদীতে ভেসে আসা কাঠ এভাবে সংগ্রহ করা যায় না৷ এবছর তিস্তা সেতুতে দড়ি বেঁধে কাউকেই নীচে নামতে দেওয়া হবে না। সেতুতে কড়া নজরদাড়ির ব্যবস্থা রাখা হবে।’ ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুমুদরঞ্জন রায়ের বক্তব্য, ‘কিছু পয়সা উপার্জনের জন্য কারও জীবন চলে যাওয়ার বিষয়টি কোনওমতেই মেনে নেওয়া হবে না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিস্তা সেতুতে কাঠ সংগ্রহ করতে দেওয়া হবে না।’
তিস্তার গতিপথে থাকা জঙ্গলের কাঠ বর্ষার সময় নদীর স্রোতে ভেসে আসে। সেতুর ওপরে বাঁধা দড়িতে ঝুলে নীচে নেমে এক হাত দিয়ে দড়ি ধরে দুলতে দুলতে অন্য হাত দিয়ে কাঠ সংগ্রহ চলে। কাঠ সংগ্রহের পর ওপর থেকে নামানো অপর দড়ি দিয়ে সংগ্রহ করা কাঠ বাঁধা হয়। এরপর সেতুর ওপরে দড়ির অপর অংশ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা দলের সদস্যরা সেই কাঠ ওপরে তুলে নেন। কেউ কেউ ভরা তিস্তায় সাঁতার কেটেই কাঠ সংগ্রহ করেন। কেউ আবার ভেলায় ভেসে কিংবা নৌকায় করে কাঠ সংগ্রহ করেন। নদীতে জল যত বাড়তে থাকে ভেসে আসা কাঠের পরিমাণও বাড়তে থাকে, আর ঝুঁকিও ততই বেশি করে বাড়তে থাকে৷ এই সময় এলাকার এক অংশের মানুষের মধ্যে কাঠ সংগ্রহের হিড়িক যেন কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
সংগ্রহ করা কাঠ জ্বালানির জন্য রেখে বাকি কাঠ বিক্রি করে এই বাসিন্দারা উপার্জন করেন। তিস্তা সেতু সংলগ্ন এলাকার শতাধিক মানুষ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর থেকে কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইতিপূর্বে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তারপরও এই প্রবণতা কমেনি। যদিও কাঠ সংগ্রহকারী দলের সদস্যদের বক্তব্য, পেটের দায়েই তাঁরা এভাবে ঝুঁকি নিতে বাধ্য হন। এক কাঠ সংগ্রাহকের বক্তব্য, ‘তিস্তায় লাল সতর্কতা জারি হলে নদীতে জল বৃদ্ধি পায়, তখন কাঠ বেশি পরিমাণে ভেসে আসে।’