জিষ্ণু চক্রবর্তী, গয়েরকাটা : ডুয়ার্সের গয়েরকাটা চা বাগানের স্টাফ কোয়ার্টার থেকেই তাঁর জীবন-দৌড় শুরু হয়েছিল। গয়েরকাটার পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষালাভ। পরের পর্বের পড়াশোনার জন্য জলপাইগুড়ি জিলা স্কুলে যাওয়ার আগে গয়েরকাটা চা বাগানের অলিগলিতে তাঁর জীবন কেটেছে। আরও পরে কলকাতায় গিয়েছেন। সাহিত্যজগতে ক্রমশই নিজেকে মেলে ধরেছেন, অজস্র পুরস্কারে সম্মানিতও হয়েছেন। সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার কিন্তু কখনোই তাঁর শিকড়কে ভোলেননি। যখনই সময় পেয়েছেন, গয়েরকাটায় ছুটে এসেছেন। নিজের অজস্র সৃষ্টিতে নিজের জন্মস্থানকে ঠাঁই দিয়েছেন। সমরেশ সোমবার না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন। প্রিয় সমরেশ ওরফে বাবলুর স্মৃতিতে গয়েরকাটা শোকে মুহ্যমান। প্রিয় মানুষটিকে বরাবর বুকে ধরে রাখতে গয়েরকাটা তো বটেই, গোটা উত্তরবঙ্গ থেকেই সরকারি উদ্যোগে সমরেশের জন্মভিটের সংরক্ষণের দাবি জোরালো হয়েছে। ওই জন্মভিটেয় মিউজিয়াম তৈরির পাশাপাশি সমরেশের আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের দাবিও উঠেছে।
গয়েরকাটা নাগরিক উন্নয়ন মঞ্চের সম্পাদক পঙ্কজ দত্ত বললেন, মানুষটির সঙ্গে গয়েরকাটাবাসীর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। তিনি চলে যাওয়ায় আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি। আমরা সবাই ওঁর স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চাই। তাই আমরা সরকারের কাছে সমরেশ মজুমদারের জন্মভিটে সংরক্ষণ, মিউজিয়াম তৈরি সহ তাঁর মূর্তি তৈরির দাবি জানাচ্ছি। এই দাবির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ আশ্বাস দিয়েছেন।
একা শুধু সমরেশের সঙ্গেই নয়, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর পরিবারের সঙ্গেই গয়েরকাটার নিবিড় সম্পর্ক। ঠাকুরদা পূর্ণচন্দ্র মজুমদার গয়েরকাটা চা বাগানের বড়বাবু ছিলেন। বাবা কৃষ্ণদাস মজুমদার গুদামবাবু হিসেবে এই বাগানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ এই বাগানের আবাসনেই সমরেশের জন্ম। এই বাগানের অলিগলিতে সমরেশের ছেলেবেলার দিনগুলি কেটেছে। খেলাধুলো, মাছ ধরা, আড্ডা মারার অজস্র স্মৃতি রয়ে গিয়েছে। সেই স্মৃতিসাগরে ডুব দিতে স্কুল, কলেজ ও পরে কর্মজীবনে সমরেশ এখানে বারবারই ছুটে আসতেন। গয়েরকাটার প্রতি টানটা এতটাই বেশি ছিল যে, জলপাইগুড়িতে পড়তে যাওয়ার সময় সেখানে এখানকার মাটি নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মাটিতে সমরেশ একটি গাছ পুঁতেছিলেন। তাতে রোজ জল দিতেন আর গয়েরকাটার মাটিকে সিক্ত করতেন। গয়েরকাটা সবই দেখেছে। প্রিয় বাবলুর জন্য আজ তারও মন কাঁদছে। বাগানের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান বড়বাবু সমরেশের জন্মভিটের সেই কোয়ার্টারে থাকেন। সমরেশের স্মৃতিতে সেই আবাসনটি সংরক্ষণের দাবি জোরালো হয়েছে।
ডুয়ার্সের সাহিত্যিক সুকান্ত নাহা বললেন, স্মৃতিবিজড়িত এই কোয়ার্টারটি সংরক্ষণে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। আর তা করা হলে তাঁরা সমরেশের স্মৃতি আঁকড়ে থাকতে পারবেন বলে তাঁর ভাইসম কৃষ্ণকুমার দাস জানিয়েছেন। দাবির বিষয়টি তাঁকে লিখিতভাবে জমা দিলে তা তিনি ওপরমহলের কাছে পাঠাবেন বলে গয়েরকাটা চা বাগানের সিনিয়ার ম্যানেজার সঞ্জয় সিং জানান। তাঁর কথায়, ওপরমহলই এবিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।