সৌরভ রায়, ফাঁসিদেওয়াঃ আধার কার্ড নিয়ে আসলেই বাড়িয়ে দেওয়া হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা। কর্মীসভায় ভিড় বাড়াতে এই মিথ্যে প্রলোভন দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূলের এক ব্লক সভানেত্রী। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে ফাঁসিদেওয়া নজরুল মঞ্চে ‘দীক্ষা’ মহিলা কর্মীসভায়। এদিন ব্লক মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীসভা ছিল। খোদ তৃণমূলের মহিলা ব্লক সভানেত্রী পূর্ণিমা রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কর্মীসভায় ভিড় বাড়াতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, সভায় আসলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে যারা হাজার টাকা পান তাঁদের দুই হাজার করে দেওয়া হবে। সেই জন্য আনতে হবে ব্যাংকের পাসবই ও আধার কার্ডের প্রতিলিপি। এনিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও, অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেত্রী৷
ফাঁসিদেওয়ার রুম্পা দেবনাথ, রত্না দেবনাথ বলেন, ‘আধার কার্ড এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসবই নিয়ে এলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে শুনে এসেছিলাম। এসে দেখলাম পার্টির মিটিং হচ্ছে।’ সরিফা খাতুন বলেন, ‘আমাদের মিথ্যে বলে ডাকা হয়েছিল। পরে, জমা নেওয়া আধার কার্ডের জেরক্স মাঠে ফেলে দিয়ে সবাইকে নিজেদের কাগজ নিতে বলা হয়েছে। দলের কর্মীসভা জানলে আসতাম না।’ সরিফা খাতুন বলেন, ‘ব্লক সভানেত্রী পূর্ণিমা রায় বলেছিলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে যারা হাজার টাকা পান তাঁদের দুই হাজার করে দেওয়া হবে। কিন্তু, এসে দেখলাম কর্মীসভায় ভিড় বাড়াতে মিথ্যে বলা হয়েছিল।
সহেরবানু খাতুন নামে আরেক মহিলা বললেন, ‘সবাই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কথা শুনে এসে দেখেন তৃণমূলের সভা হচ্ছে। এরপর জমা নেওয়া আধারের জেরক্স মাঠে ফেলে দেওয়া হয়। নেত্রীরা সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন আর সময় নষ্ট করছেন।’ ফাঁসিদেওয়া সাংগঠনিক ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস সভানেত্রী পূর্ণিমা রায় বলেন, ‘কাউকেই এ ধরনের কথা বলিনি। কেউ কেউ আমার নামে অভিযোগ করে থাকতে পারেন, পরে তা মহিলাদের মুখে মুখে ছড়িয়েছে। যারা আধার কার্ডের জেরক্স এনে জমা দিয়েছিলেন, তাঁরা যাতে সেগুলি ফেরত পান সে ব্যবস্থা করা হবে।’
কিন্তু, এদিন ফাঁসিদেওয়া নজরুল মঞ্চে মহিলা কর্মীসভাকে কেন্দ্রে করে যা যা ঘটেছে তাতে একাধিক প্রশ্ন রাজ্য শাসকদলের বিরুদ্ধেই উঠছে। বিরোধীরাও এই সুযোগে তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। কর্মীসভায় জালাস নিজাম তারা, চটহাট এবং ফাঁসিদেওয়া অঞ্চলের মহিলাদের নিয়ে কর্মীসভা হওয়ার কথা। গাড়ি করে আগেই কিছু মহিলাদের নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, ফাঁসিদেওয়া থেকে প্রচুর মহিলা আধার কার্ডের জেরক্স নিয়ে সেখানে আসতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে নজরুল মঞ্চে কর্মীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছিল না।
সমস্ত মহিলারা নিজেদের আধার কার্ডের জেরক্স নজরুল মঞ্চে জমা করেন। মহিলাদের জিজ্ঞেস করতেই তাঁরা জানালেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে সকলের টাকা দ্বিগুন করে দিতে নজরুল মঞ্চে আধার কার্ড জমা নেওয়া হচ্ছে খবর পেয়ে তাঁরা এসেছিলেন। পরে, সেই আধারের জেরক্স ফেলে দিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে, মাঠে ফেলে দেওয়া আধারের জেরক্স হুড়োহুড়ি করে তুলে বাড়ি ফিরে যান মহিলারা। সেইসঙ্গে, সভায় ভিড় বাড়াতে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেকে আনার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ মহিলা কর্মীরাও।
সাম্প্রতিককালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বরাদ্দ টাকা বাড়ানোর কোনও ঘোষণা তো করেননি, তাহলে, এলাকায় জনপ্রিয়তা বাড়ানোর বদলে শুধুমাত্র কর্মীসভায় লোক টানতে একজন ব্লক সভাপতি এমন প্রলোভন দিয়ে দলের কর্মীদের হয়রানিতে ফেলতে পারেন তানিয়ে দলের কর্মীদের অন্দরেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ভারতীয় জনতা কিষাণ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অনিল ঘোষের মন্তব্য, ‘তৃণমূলের নেতানেত্রীরা জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছেন। সভার কথা বললে কর্মীরা আসবেন না। তাই, মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে গরীব খেটে খাওয়া মহিলাদের হয়রানি করছেন।’