রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: বাঁধ সংস্কারের জন্য তিস্তা ক্যানালের (Teesta canal) জল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে শিলিগুড়িতে পানীয় জল সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া নিয়ে ব্যাপক হইচই পড়েছে। অথচ আরও একটি বিষয় রয়ে গিয়েছে জনসাধারণের অগোচরে। জলের অভাবে ফুলবাড়িতে (Phulbari) বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও বন্ধ বর্তমানে। আপাতত এক মাসের জন্য কেন্দ্র বন্ধ বলা হলেও ফের কবে প্রয়োজনমাফিক জল আসবে, কবে থেকে আবার কেন্দ্রের টারবাইন ঘুরবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
তীব্র গরমের জেরে রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এই পরিস্থিতিতে একটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে স্বাভাবিকভাবে। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির চিফ ইঞ্জিনিয়ার (হাইডেল) শিবেশ দেব বলেছেন, ‘এক মাস জল সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। তাই এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ। আশা করছি, ওই সময়সীমার পর পুনরায় উৎপাদন শুরু করা যাবে।’
ফুলবাড়িতে তিস্তা ক্যানালকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালু রয়েছে। গজলডোবা থেকে ক্যানালের মাধ্যমে এই জল আসে। ‘তিস্তা ক্যানাল ফল হাইডেল প্রোজেক্ট’ নামে এই কেন্দ্রে রয়েছে তিনটি পাওয়ার স্টেশন। এক একটি পাওয়ার স্টেশনে তিনটি করে টারবাইন রয়েছে। সেগুলোর এক একটিতে ৭.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। অর্থাৎ একটি পাওয়ার স্টেশনে ২২.৫ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। তিনটি পাওয়ার স্টেশন একসঙ্গে চালু রাখতে পারলে রোজ তিস্তার জলকে কাজে লাগিয়ে এখানে ৬৭.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ পুরোটাই গ্রিডে পাঠিয়ে দিতে হয়।
তবে, শিলিগুড়ির দৈনিক গড় বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৭০ মেগাওয়াট। গরমে এবং দুর্গাপুজোর সময় বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা ১০০ মেগাওয়াটে পৌঁছায়। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় সংকটের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও কোম্পািনর কর্তাদের দাবি, বিদ্যুতের ঘাটতি হলে সামগ্রিকভাবে গোটা রাজ্যেই প্রভাব পড়বে।
জলের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে তিনটি ইউনিট পুরোপুরি চালাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তিস্তা ক্যানাল থেকে রোজ ৩৩৫ কিউমেক জল পাওয়ার কথা। কিন্তু গত সাত-আট বছরে জলের সরবরাহ অনেকটা কমেছে। তবুও যেটুকু জল আসছিল, তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চলছিল। বর্তমানে সেটাও বন্ধ।
বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সূত্রে খবর, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সেচ দপ্তর চিঠি দিয়ে আগামী এক মাস তিস্তায় জল থাকবে না বলে জানিয়েছে। আপাতত এক মাসের জন্য বলা হলেও তিস্তায় জল সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে মনে করছে কোম্পানি।