রামপ্রসাদ মোদক, রাজগঞ্জ: ‘হারিয়ে যাওয়া সেই গানের কলি…।’ না, গানের নয়, খাবার। আর সেই খাবার ঘিরে রাজগঞ্জ ব্লকের চিয়ারী খাঁড়িতে হয়ে গেল অভিনব পিকনিক (Picnic)। রবিবার দিনভর নাচগান, নানা লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠানে মাতলেন প্রায় ৩০০ মানুষ। এই অভিনব পিকনিকের উদ্যোক্তা ‘দেশি মানসির মিলনমেলা’। উত্তরবঙ্গের ভূমিজদের খাদ্যাভ্যাসের বিভিন্ন পদ এখানে প্রাধান্য পেয়েছিল। প্রতরাশে ছিল তেলানি চা, মুড়ি-ঘুগনি। দুপুরের মেনুতে ছিল ঠাকুরীর ডাল, লাফা শাকের প্যালকা, শিদলের আওটা, দীঘল গুজুরির ফকদই, শুঁটকি মাছ বাটা, তেলুয়া খাসির মাংস, গুয়া পান। চিয়ারী খাঁড়ির এই পিকনিকে শুধু রাজগঞ্জ নয়, কোচবিহার, শিলিগুড়ি, মানিকগঞ্জ ও অসম থেকেও অনেকে অংশ নেন। কোচবিহারের যোগেন রায়, অসমের নারায়ণচন্দ্র প্রধান, শিলিগুড়ির (Siliguri) বৈকুণ্ঠ রায়, মানিকগঞ্জের বিকাশ রায়চৌধুরীরা পিকনিকে অংশ নিয়ে রীতিমতো খুশি। ছিলেন জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সাংসদ সস্ত্রীক বিজয়চন্দ্র বর্মন। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গের ভূমিজদের হারিয়ে যাওয়া খাবার তুলে ধরে এই পিকনিক খুব আনন্দদায়ক মনে হয়েছে। পিকনিকে বাজেনি ডিজে বা সিনেমার গান। বরং সারাদিন ধরে নানা জায়গা থেকে আসা লোকশিল্পীরা ভাওয়াইয়া, পালাটিয়া গান, চোরচুন্নি গান পরিবেশন করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমী ও চিনা খাবারের দাপটে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলা তথা উত্তরবঙ্গের একদা নানা জনপ্রিয় পদগুলি। আগের মতো অনেকে এসব রান্না করতেও পারেন না। মোমো, চাউমিন, পাস্তা, পিজ্জারা আমাদের রোজকার খাদ্যাভ্যাসে থাবা বসিয়েছে। এমন একটি পিকনিকের আয়োজন হওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি।’ তুফানগঞ্জ থেকে পিকনিকে এসেছিলেন ভাওয়াইয়াশিল্পী মঞ্জু রায়। তাঁর কথায়, ‘জীবনে প্রচুর পিকনিক করেছি। তবে এই পিকনিকের অনুভূতি আলাদা।’ তিনি এখানে ভাওয়াইয়া গানও পরিবেশন করেন।
আয়োজক হরিহর রায়, ভূপেন রায়, অরুণ রায়, টয়াল সিং রায়রা জানান, শুধু খাওয়াদাওয়াই নয়, ছিল নাচগানের ব্যবস্থাও। হরিহর রায় বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের নিজস্ব খাবার নিয়ে এই পিকনিকের আয়োজন করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি। অসম, কোচবিহার থেকে মানুষ যোগ দিয়েছেন। এখানে সবাই মন ভরে খাবার উপভোগ করেছেন। সবার মুখের স্বাদ বদলাতে পেরেছি। সবার তৃপ্তির হাসিটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আশপাশের অনেকেই অংশ নিয়েছেন।’