মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি: কানু সান্যালের বাড়ি নিয়ে রাজনৈতিক তর্জা শুরু হল। বাড়িটিতে লাইব্রেরি করতে চায় মহকুমা পরিষদ। তার তীব্র বিরোধিতা করে একে বাড়ি দখলের ছক বলে মন্তব্য করেছে সিপিআই (এমএল-কানু সান্যাল গোষ্ঠী)। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে কানু সান্যালের বাড়ি দখলের তর্জা অন্য মাত্রা পাচ্ছে।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ বলেন, ‘কানু সান্যাল এই গ্রামে থাকতেন। জায়গাটি ঐতিহাসিক কেন্দ্র। প্রচুর মানুষ বাইরে থেকে এই জায়গাটা দেখতে আসেন। তাই তাঁর বাড়িকে কেন্দ্র করে আমরা লাইব্রেরি গড়ে তুলতে চাই। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী এই এলাকার সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।’
সিপিআই (এমএল-কানু সান্যাল গোষ্ঠী)-র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কানু সান্যাল। তঁার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে গত ১০ মার্চ বিবৃতি জারি করে ওই বাড়িতে লাইব্রেরি তৈরির বিরোধিতা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নকশালবাড়ি সহ গোটা জেলায় এর বিরুদ্ধে পোস্টারিং এবং লিফলেট বিলি করা হয়েছে। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সম্পাদক দীপু হালদার বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে বিবৃতি জারি করে রাজ্য সরকারের জোরপূর্বক কানু সান্যালের বাড়ি দখল করে লাইব্রেরি তৈরির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের মাধ্যমে এই জঘন্য ষড়যন্ত্র করছে। যেখানে আমাদের পার্টি অফিস, দলীয় কার্যালয় রয়েছে সেই জায়গায় জোরপূর্বক কিছু করা হলে আন্দোলন তীব্রতর হবে। রাস্তায় নেমে আমরা আন্দোলন শুরু করব। আপাতত জায়গায় জায়গায় শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের এই জোরপূর্বক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পোস্টারিং, লিফলেট বিলি চলছে।’
হাতিঘিসা (Hatighisa) সেবদোল্লাজোতে মানঝা নদীর পাশে প্রায় তিন কাঠা জমিজুড়ে কানু সান্যালের ভিটে। জমি যাতে দখল হয়ে না যায় সেজন্য সরকারিভাবে ভিটের চারপাশে কংক্রিটের নির্মাণ তোলা হয়েছে। চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে জায়গাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। বাঁশের বেড়া দেওয়া টিনের ঘরেই দিন কেটেছে প্রবাদপ্রতিম নকশাল নেতারা। ঘরের ভেতর দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যবহার করা কানুবাবুর যাবতীয় জিনিসপত্র এবং বইপত্র রয়েছে।
সিপিআই (এমএল-কানু সান্যাল গোষ্ঠী)-র বিরোধিতার পর সভাধিপতি বলেন, ‘আমরা সেখানে লাইব্রেরি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে যা করা হবে সেখানকার বাসিন্দাদের মতামত নিয়েই করা হবে। যদি এই নিয়ে কোনও বিরোধ থাকে তাহলে আমরা করব না।’
কানুবাবুর গ্রাম সেবদোল্লাজোত নিয়ে রাজনীতি টানাটানি কম হয়নি। ২০১৪ সালে বিজেপির তৎকালীন সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া কানু সান্যালের গ্রাম দত্তক নেন। এই গ্রামকে আদর্শ গ্রামে পরিণত করা হবে বলে কানু সান্যালের ভিটেমাটিতে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন তৎকালীন সাংসদ।
অরুণ ঘোষের দাবি, বিজেপির সাংসদ এই গ্রাম দত্তক নিয়ে কোনও উন্নয়ন করেননি। আমরা মহকুমা পরিষদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই গ্রামকে আদর্শ গ্রাম হিসেবে তুলে ধরতে চাই। গত আড়াই বছরে এই গ্রামে আট কোটি টাকার উপরে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। পেভার্স ব্লকের রাস্তা হয়েছে। তিন কোটি, দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সেবদোল্লাজোত গ্রামকে সজল গ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে।’
উন্নয়নের ফিরিস্তি দিলেও সভাধিপতির কথায় চিঁড়ে ভিজছে না সিপিআই (এমএল-কানু সান্যাল গোষ্ঠী)-এর শক্ত ঘঁাটিতে। আর তাতেই ফের অশান্তির মেঘ ঘনাচ্ছে সেবদোল্লাজোতে।