শামুকতলা: মাটির টান সহজে ভোলা যায় না। সেই মাটির টানেই প্রায় চার দশক পরে নিজের গ্রামেই ফিরে এসেছেন মিনি বসুমাতা। শুধু ফিরেই আসেননি সঙ্গে বুকের মধ্যে নিয়ে এসেছেন তাঁর ছোটবেলার মতো সবুজে ভরা গ্রাম। বর্তমানে মিনির বয়স ৬২ বছর। এই বয়সে নিজের হাতের বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করছেন গ্রামে।
মিনি মহাকালগুড়ি গ্রামের মেয়ে। তাঁর বাবা মহাকালগুড়ি মিশন হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মাইকেল বসুমাতা। তাঁর গ্রামের প্রতি প্রেম ও এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। যদিও মিনি বলছেন, ‘এ আর এমন কী! দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলেও ফাঁকে মাঝেমধ্যেই গ্রামে ঘুরে যেতাম। অবসর নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিই ইনিজের গ্রামেই পাকাপাকিভাবে বসবাস করব। গ্রামে সবুজায়ন সহ আরও কিছু কাজ করব।’
মিনি দীর্ঘদিন অসমের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে চাকরি করেছেন। ডায়াবেটিস রোগের আয়ুর্বেদিক ওষুধ নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি করেছেন তিনি। বিবাহসূত্রে দীর্ঘ চার দশক অসমেই থেকেছেন। কিন্তু এতদিন বাইরে থেকেও একটুও কমেনি সেই মাটির টান। মিনি মহাকালগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী ছিলেন। তখন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার পদে ছিলেন এডব্লিউইউ ম্যাকারসন। আদতে স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হলেও চাকরি সূত্রে ম্যাকারসন দীর্ঘদিন ধরে রয়ে গিয়েছিলেন মহাকালগুড়িতে। স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ছিলেন রুমুদি নামে।
এদিকে, মিনি অবসর নেওয়ার পর মহাকালগুড়িতে ফিরে অনুভব করেন, চারপাশটা কেমন যেন ফ্যাকাশে। প্রিয় শিক্ষিকা রুমুদির বাংলোর সামনে সেই সুন্দর ফুল বাগানটা আর আগের মতো নেই। সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্য ঠিক করে নেন। শুরু করে দেন গাছের পরিচর্চা। নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন নার্সারিতে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কিনে আনছেন। সেই সব গাছ গ্রামের রাস্তার ধারে, রুমুদির বাংলোর সামনের বাগানে লাগাচ্ছেন। মিনি বলেন, ‘এই কাজটাকে মন দিয়ে করছি। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায়, মাঠে অনেক গাছ লাগিয়ে গ্রামটাকে সবুজে সবুজে ভরিয়ে দিতে চাই।’ মিনির নিজের গ্রামের প্রতি এতটা টান ভালোবাসা দেখে খুশি মহাকালগুড়ির বাসিন্দারা।
মহাকালগুড়ি মিশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিরণ বসুমাতা বলেন, ‘মিনি বসুমাতা মহাকালগুড়ি গ্রামেরই মেয়ে। দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার পরেও নিজের গ্রামের প্রতি এতটা টান দেখে আমি অবাক। তার এই উদ্যোগে অনেক খুশি আমরা।’ এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক পঙ্কজ বসুমাতাম জানান, ‘মিনি বসুমাতা ছোটবেলা এই গ্রামেই কাটিয়েছে। তারপর দার্জিলিংয়ে পড়াশুনার পর চাকরি এবং বিবাহসূত্রে অসমে থেকেছেন। এরপরেও নিজের গ্রামকে সুন্দর রাখার উদ্যোগ ভাবা যায় না। এমনভাবে নিজের গ্রামকে ভালোবাসার ঘটনা বিরল।’