সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: বিশ্বে শিল্পোৎপাদনে ভারতবর্ষকে শক্তিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে আগামীর ভাবনা কী হওয়া উচিত, সে বিষয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে (PM Narendra Modi) নিজেদের পরিকল্পনার কথা শোনাবেন উত্তরবঙ্গের তিন তরুণ ও এক তরুণী। আগামী ১২ জানুয়ারি স্বামীজির জন্মদিনে দিল্লির ‘ভারত মণ্ডপম প্রেক্ষাগৃহ’-এ অনুষ্ঠিত বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে তরুণ নেতাদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে নিজের প্রস্তাব দেবেন তাঁরা। রাজ্য থেকে দিল্লিগামী ৩৮ জনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদলে উত্তরবঙ্গের (North Bengal) চারজনের মধ্যে রয়েছেন ধূপগুড়ির (Dhupguri) নেতাজিপাড়ার বাসিন্দা সুকান্ত মহাবিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক আকাশ ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহরের কংগ্রেসপাড়ার বাসিন্দা কৃষিবিজ্ঞানের ছাত্র প্রীতম সরকার, শিলিগুড়ি (Siliguri) দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী মল্লি দাস এবং মালদা শহরের সিঙ্গাতলার বাসিন্দা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যার ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র পঙ্কজকুমার রায়। এঁদের মধ্যে পঙ্কজ গত বছর এমনই এক প্রতিযোগিতায় দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য রেখে এসেছেন।
১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি সারা দেশের ৩০ লাখের বেশি অংশগ্রহণকারীর মধ্যে তিন ধাপের কঠিন বাছাইপর্ব উতরে নির্বাচিত উত্তরবঙ্গের চার প্রতিনিধি ৮ জানুয়ারি হাওড়া থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন। তার আগে কলকাতায় রাজভবনে তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানাবেন স্বয়ং রাজ্যপাল। জাতীয় যুব উৎসব ২০২৫-এর আগে এবারে ‘বিকশিত ও বিশ্বগুরু ভারত’ গড়তে যুবদের সঙ্গে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনার সুযোগ করে দিতেই ক্রীড়া ও যুবমন্ত্রকের উদ্যোগে আয়োজিত হতে চলেছে এই অনুষ্ঠান।
গত বছর নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আয়োজিত প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন দেশের তিরিশ লাখের বেশি তরুণ-তরুণী। সেখানে উতরে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে দশটির মধ্যে যে কোনও একটি পছন্দসই বিষয় বেছে নিয়ে অনলাইন প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় সফল হতে হয়েছে তাঁদের। সবশেষে গত ২২ ডিসেম্বর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত হয় লাইভ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন। সেখানে অংশ নিয়ে চূড়ান্ত বাছাইয়ে রাজ্যের মধ্যে ৩৮ জন এই সুযোগ পেয়েছেন। সেখানেই ‘মেকিং ইন্ডিয়া গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং পাওয়ার হাউস’ বিষয়ের ওপর আকাশের প্রবন্ধ মন কাড়ে বিচারকদের। মল্লি ও পঙ্কজের বিষয় ‘বিকাশ ভি, বিরাসত ভি’ এবং প্রীতম বলেছেন কৃষিতে ফলন বাড়ানোর বিষয়ে। স্বামীজির জন্মদিনে দিল্লিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশকে আগামীদিনে শিল্পোৎপাদনে শীর্ষে তুলতে যেসব নীতি চালু বা পরিবর্তন করা দরকার তা নিয়ে নিজেদের স্পষ্ট মতামত জানাবেন চারজনই।
স্নাতক স্তরে গণিতে টপার আকাশের মতে, ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষে দেশকে আর্থিক ও শিল্পোৎপাদনে বিশ্বগুরু করে তোলা সম্ভব। এজন্যে দীর্ঘমেয়াদি দূষণমুক্ত ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি শিল্পের বিকাশকে পাখির চোখ করার প্রস্তাব দিতে চান আকাশ। সেইসঙ্গে এআইকে বিকাশে কাজে লাগানো, কৃষি ও শিল্পের সমন্বয় এবং সর্বোপরি প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়া এবং সামগ্রী পরিবহণ ব্যবস্থায় জোয়ার আনার বিভিন্ন উপায় থাকবে ধূপগুড়ির তরুণের প্রস্তাবে। আকাশ চাইছেন সময় সু্যোগ পেলে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে শিল্পোৎপাদনের বিকাশে প্রধানমন্ত্রীর নজর কাড়তে। একইভাবে সুযোগ পেলে প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরের পর্যটনের বিকাশের প্রস্তাব দিতে চান মল্লি। প্রীতমের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে উত্তরে কৃষিনির্ভর শিল্পের বিকাশে।
দিল্লির পথে রওনা হওয়ার মুখে আকাশের বক্তব্য, ‘৩০ লাখের বেশি অংশগ্রহণকারী দেখে প্রথমটায় ঘাবড়েই গেছিলাম। তবে প্রাথমিক পর্বে প্রশ্নোত্তর যত এগিয়েছে ততই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। প্রবন্ধটা যখন ঠিকঠাক হল তখন ভয় কেটে গিয়েছিল। এরপর শান্তিনিকেতনে ডাক পেলাম, তারপর দিল্লিতে। সুযোগ পেলে আমার জেলা এবং উত্তরবঙ্গ নিয়ে শিল্প গড়ার ভাবনা জানাব প্রধানমন্ত্রীকে।’