প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বিদেশ সফর সেরে দেশে ফেরা সত্ত্বেও মণিপুর নিয়ে কোনও বৈঠক ডাকেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অথচ বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শীর্ষ সদস্যদের সঙ্গে পাঁচ ঘন্টার লম্বা বৈঠক সেরে আবারও শিরোনামে তিনি। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে দেশের সর্বত্র গেরুয়া আধিপত্য বিস্তার করবার লক্ষ্যে, বুধবার নয়াদিল্লিতে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা, বিজেপি জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা সহ অন্যান্য শীর্ষ দলীয় নেতৃত্ব৷ বিজেপি সূত্রের দাবি, এই বৈঠকে আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রাথমিক রণকৌশল স্থির করেছেন মোদি, যেখানে ত্রিস্তরীয় স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে ভোটে বাজিমাৎ করতে চেয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের এই ম্যারাথন বৈঠকের পরেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা এই ত্রিস্তরীয় পরিকল্পনা নিয়ে। দলীয় সূত্রের দাবি, মোদি প্রস্তাবিত এই বিশেষ ত্রিস্তরীয় পরিকল্পনার ভরকেন্দ্রে রয়েছে দেশের তিনটি প্রধান ভৌগলিক অঞ্চল – উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব ভারত৷ দেশের ৫৪৩টি লোকসভা আসনকে এই তিনটি অঞ্চলের মধ্যে ভাগ করার কথা বলেছেন মোদি। একইসাথে দেশের প্রতিটি রাজ্যে লোকসভা আসনগুলির জন্য আলাদা রণকৌশল গ্রহণ করা হবে৷ সেই লক্ষ্যেই আগামী ৬,৭ এবং ৮ জুলাই গুয়াহাটি, দিল্লি এবং দক্ষিণে হায়দ্রাবাদে পৃথক বৈঠকে বসবেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা৷ জানা গেছে, বৈঠকের প্রথম দিন গুয়াহাটিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসবেন বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, অসম , ত্রিপুরা এবং ওড়িশার প্রদেশ বিজেপি নেতৃত্ব৷ পরের দিন দিল্লিতে বৈঠক করবেন জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল, উত্তরাখন্ড, রাজস্থান, হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং দিল্লির নেতারা৷ শেষ দিন অর্থাত্ ৮ জুলাই হায়দ্রাবাদে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বৈঠকে বসবেন কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরল সহ বাকি রাজ্যগুলির প্রদেশ নেতৃত্ব৷ সঙ্গে থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সভাপতি, সচিব, সাংসদ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গোটা দেশকে চার ভাগে ভাগ না করে তিনভাগে কেন ভাগ করা হল? কেন এই তিনটি অংশের মধ্যে ৫৪৩টি লোকসভার আসন ভাগ করা হবে? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যায় দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই উঠে আসতে চলেছে উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারত, যেখানে গেরুয়া শিবিরকে বিরোধীদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে৷ কর্ণাটকে শোচনীয় হারের পর এই মুহূর্তে দক্ষিণ ভারত কার্যত গেরুয়া শূন্য৷ সেখানকার কোনও রাজ্যেই বিজেপির শাসন নেই৷ পূর্ব ভারতেও বিজেপির অবস্থা শোচনীয়৷ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো তিনটি বড় রাজ্যে কায়েম বিরোধী শাসন৷ ওড়িশায় ‘সরকার-বান্ধব’ নবীন পট্টনায়কের বিজেডি সরকার ক্ষমতায় থাকলেও স্বস্তিতে নেই বিজেপি৷ তুলনামূলকভাবে দেশের পশ্চিম এবং মধ্য অংশে বিজেপির অবস্থান ‘সুখকর’৷ গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও গোয়া তিনটি বড় রাজ্য তাদের দখলে, একই অবস্থা মধ্যপ্রদেশ ও উত্তর প্রদেশেও। এই আবহে আপাতত দেশের পশ্চিমাংশের দিকে কম নজর দিলেও চলবে বলে মনে করছে বিজেপির শীর্ষ স্তর৷
উল্লেখ্য লোকসভা ভোটের আগে দলের তরফে গৃহীত আসনভিত্তিক রণকৌশল কেমন হবে তার প্রাথমিক খসড়াও তৈরি করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, বুধবারের ম্যারাথন বৈঠকেই, দাবি জানানো হয়েছে দলীয় সূত্রে৷ এই খসড়ায় সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী, গরিব, অনগ্রসর শ্রেণীর প্রতিনিধিদের প্রতি৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধে যাতে এই শ্রেণীর প্রতিনিধিদের হাতে সরাসরি পৌঁছয় তা নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷ এই মর্মে বিশেষ উদ্যোগী হতে হবে প্রতিটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে, নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর৷ আগামী বছরের লোকসভা ভোটের আগে হাতে থাকা মাত্র দশ মাস সময়ে, প্রত্যেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে তাদের নিজের নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে সর্বাধিক সময় কাটানোর নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ একইসাথে রয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন করা নিয়েও পূঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা ও পর্যালোচনার প্রস্তাবও।
পাশাপাশি এই যুদ্ধকালীন আবহে নিজের মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য রদবদলের কাজও সেরে ফেলতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং৷ নয়াদিল্লিতে সরকারি সূত্রের দাবি, সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের আগে জুলাইয়ের প্রথম দিকেই হতে পারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য রদবদল৷ আগামী সোমবার, ৩ জুলাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে আবারও একটি বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজে যেখানে সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ এই বৈঠকের প্রসঙ্গ সামনে আসার পরেই রাজধানী দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে জল্পনা তীব্র হয়েছে৷ প্রতিবারের মতই কোন কোন মন্ত্রী বাদ যেতে পারেন, কারা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন জল্পনা শুরু হয়েছে সেই বিষয়েও৷ বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলা থেকে দুজন মন্ত্রীও হারাতে পারেন পদ, তাঁদের স্থানে কার ভাগ্যে শিঁকে ছিড়বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব; সে নিয়েও জল্লনা শুরু হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছে বিশ্ব ক্রিকেটে নবাগত আমেরিকা।…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মিটেছে লোকসভা নির্বাচন, ঘোষণা হয়েছে ফলাফল। বাংলায় রেমাল সাইক্লোনের পর যেন…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মহাত্মা গান্ধি, বি আর অম্বেডকর থেকে শুরু করে ছত্রপতি শিবাজি, মহারাণা…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা ভোট (Lok sabha election 2024) মিটতেই প্রশাসনিক কাজে গতি আনতে…
ফালাকাটা ও পলাশবাড়ি: কোথাও তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। কোথাও ঘন ঘন লোডশেডিং। কোথাও আবার লো…
মালদা: বিধানসভা ভোটে নজরকাড়া ফল করেও, লোকসভা ভোটে (Lok sabha election 2024) মালদায় (Malda) জিততে…
This website uses cookies.