সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির জেরে পুজোর মুখে আকাশছোঁয়া সবজির দাম। ফলে উৎসবের মরশুম শুরুর আগে আনাজ কিনতে গিয়ে পকেটে টান পড়ছে গৃহস্থের। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, বৃষ্টির জেরে চাষের জমিতে জল জমে যাওয়ায় এবং চাহিদার তুলনায় কম জোগানের ফলেই দাম বেড়েছে। কালীপুজো পর্যন্ত এমনই চলবে বলে তাঁদের দাবি।
যে কাঁচা লংকা ক’দিন আগেও ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, সেটিই রবিবার ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে বিকোল শিলিগুড়ির বিভিন্ন বাজারে। ফুলকপির দাম ক’দিন আগেও ঘোরাফেরা করেছে ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। সেই ফুলকপি এদিন বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। আলু, পটল, ঝিঙে, পেঁয়াজ, রসুন, শসা, বিনস, টমেটো, বাঁধাকপি, স্কোয়াশের মতো প্রতিটি সবজির দামই গড়ে ৫০ টাকা বেড়েছে। ফলে বাজারে গিয়ে অনেককেই ভিরমি খেতে হয়েছে এদিন।
সবজির দামে নজরদারির জন্য এর আগে টাস্ক ফোর্সকে সক্রিয় হওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর দিনকয়েক লোকদেখানো অভিযান হলেও এখন তা কার্যত বন্ধ। ফলে খুচরো বাজারে যে যেমন ইচ্ছে দাম নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। দার্জিলিং জেলা টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা শিলিগুড়ির মুখ্য নিয়ন্ত্রিত বাজারের সচিব অনুপম মৈত্রর সাফাই, ‘পেঁয়াজ, রসুন, টমেটোর দাম কিছুটা বেড়েছে। এই তিনটেই ভিনরাজ্য থেকে আসে। কয়েকদিনের বৃষ্টির জেরে সবজির দাম সাময়িকভাবে হয়তো কিছুটা বেড়েছে। তাড়াতাড়ি সেই দাম কমে যাবে বলে আশা করছি।’
টাস্ক ফোর্সের অভয়বাণীর পরও অবশ্য চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। এদিন সকালে টিকিয়াপাড়া বাজারে সবজি কিনতে গিয়েছিলেন দেশবন্ধুপাড়ার বাসিন্দা পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী উত্তম মির্ধা। পাঁচশো টাকার নোট ভাঙতি করেও থলের অর্ধেক না ভরায় উত্তমকে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেল। তাঁর কথায়, ‘পুজো যত ঘনিয়ে আসছিল, ততই সবজির দাম কমছিল। কিন্তু তিনদিনের বৃষ্টিতে এভাবে আনাজের দাম বেড়ে যাবে, তা ভাবাই যাচ্ছে না। গত রবিবার সবজির দাম যা ছিল, তার চাইতে এদিন প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা করে বেড়ে গিয়েছে।’ দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনিক নজরদারির দাবি জানিয়েছেন বাবুপাড়ার বাসিন্দা ডোনা সরকার। তাঁর কথায়, ‘অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি লাভের জন্য জোগান কমের কথা বলে দাম বাড়ানো হয়। এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।’
শহরের হায়দরপাড়া বাজারে ক’দিন আগেও টমেটোর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। সেই টমেটো এদিন দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়েছে। সুভাষপল্লি, বিধান মার্কেটেও দামে ফারাক ছিল ১০-১৫ টাকা। শহরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। ৭০ টাকা দরের পেঁয়াজের মান তুলনায় ভালো। বিক্রেতারাই জানালেন, ওই মানের পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
রসুনের দাম অবশ্য সব বাজারেই ৩০০ টাকা কেজিতে পৌঁছে গিয়েছে। সুভাষপল্লি বাজারের সবজি বিক্রেতা তপন কুণ্ডুর কথায়, ‘আড়তে প্রতিটি সবজি বেশি দামে কিনছি। সেই কারণে লাভ রেখে বেশি দামে বিক্রি করেছি। এতে আমাদের হাত নেই।’ বিধান মার্কেটের সবজি বিক্রেতা স্বপন কুণ্ডু, পবিত্র সাহার মতো ব্যবসায়ীর দাবি, অনেক জমিতে জল জমে গিয়েছে। সেই কারণে সবজি নষ্ট হয়েছে।
সুভাষপল্লির বাজারে এদিন বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা কেজি দরে। বেগুনের দাম ছিল ১৬০ টাকা প্রতি কেজি, যা বৃষ্টির আগেও বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার আশপাশে। শসা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি দরে, ক’দিন আগেও যার দাম ছিল ৪০ টাকা। সুভাষপল্লির বাসিন্দা শতদল দাশগুপ্ত এদিন বাজারে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘পুজোর বাজারে এমনিই হাত ফাঁকা। তার ওপর সবজির এত দাম হলে খাবটা কী?’