সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

কবিতা

শেষ আপডেট:

কষ্টের টুকিটাকি

রামকিশোর ভট্টাচার্য

 

একটা কষ্ট পড়ে আছে বাগানে। আমার জানলা

হাত নাড়ছে ইশারার। কষ্টকে কেউ প্রশ্ন করবে না

এখানে এলে কেন। কেউ জানতেই চাইবে না

কোন রং তার। মহাপ্রাণ দক্ষিণ হাওয়া ভাববে

তাকে একটা চুমু দিলে কেমন হয়। চুপ করে

জিজ্ঞাসা করবে — কে তোমায় চেনে?

ঝকঝকে সম্পর্কের বাষ্প মেখে —

কার হৃদয়ের নীচে রাত কাটাও?

পাতারা ঘুমচি মেরে দেখবে —

ঠোঁট দুটোয় খননের দাগ আছে কি না।

এঘর তখন মাঠপত্তর। দুহাত ছড়িয়ে —

মা-বাপ হারানো ছবি। ওঘর ছাত্রকাল,

সংবৎসর পরীক্ষা কোচিংয়ে। বসন্ত পেরিয়ে গেলেও

টুকিটাকি ঢাকা থাকে শাকে —

জলনাভির মেয়ে… 

নাদিরা আজাদ

 

এই আমার চালচুলোহীন দেশের ভেতর কয়েকটা মানচিত্র

গুলিয়ে যাচ্ছে

কোথাও সুপ্রিম কোর্টের নীরবতা-

কোথাও বস্তির ঘরে কিশোরী বেশ্যার শীৎকার

আর গায়েগঞ্জে গেল গেল রব।

ওই যে ময়লা নাভির মেয়েদের চোখের গভীরতা

ক্লান্ত যুবকের মায়া হারানোর ব্যর্থ কান্না

বারবার মনে করায় আমরা অশ্লীল – চূড়ান্ত বেহায়া

শহুরে শৌখিন পদ্মফুলের গন্ধ ভরা শরীরের মা

কাদামাটির কাছে গেলে উগরে বমি করে জর্জরিত বিশ্বাস

আমি বুকে মাথা রেখে ফর্সা পিঠে তীব্র ব্যঙ্গ আঁকা দেখেছি

তাই আমি আর দেশের মাটিকে বিশ্বাস করি না…

নদী সমুদ্র মোহনাকে করি

কারণ তাদের জলে ডুবে নিশ্চিন্তে মরা যায়…

 

বিধাতার ড্রেসিং টেবিল 

সাহানুর হক 

 

আশ্চর্যকে বিধাতা তাঁর ড্রেসিং টেবিলে সাজিয়ে রাখেন

আয়নার সামনে একদিন চেয়ার টেনে বসে নিজেকেই

মগ্ন চোখে দেখতে থাকেন

মুগ্ধতার অবাক ঘরানায় ভাবেন কীভাবে তিনি

আবিষ্কার করে ফেলেছেন ছাদ বিহীন সুবিশাল মহাকাশ

হয়তো পলকের বিরতি ক্ষণে

নতুবা নিঃশ্বাস এবং প্রশ্বাসের ব্যবধানে তাঁর অদৃশ্য হাতে

গ্রহমণ্ডল থেকে বায়ুমণ্ডল কিংবা বিস্তারিত ইউনিভার্স

তিনি আরও ভাবেন, সময়ের আশ্চর্য বাঁধনের কথা

‘জন্মিলে মরিতে হবে’- এই সব চিরন্তন সত্যের কথাও…

বিধাতা তাঁর ড্রেসিং টেবিলে একাকী

বসে থাকেন নির্বাপণের কলম হাতে নিয়ে

অনর্গল লিখে যান অবিশ্রামী ঘড়ির কাঁটার মতো

কতকিছুই তো লেখা হয়ে গেছে

তার থেকে বেশি বেশি বাকি আছে এখনও

আচমকা নির্জন বিরহ বেলাকে খুব কাছে ডেকে নেন

আলিঙ্গন করেন পৃথিবীর সমস্ত নীরবতা ও কম্পন

দূরে, বহু বহু ক্রোশ আলোকবর্ষ দূরে থেকে জানান দেন

তাঁর সৃষ্টির হাতে আবিষ্কৃত সকল অপার্থিব আশ্চর্যের ভিতরে

মা ও শিশুর মতো আশ্চর্য সম্পর্কটির কোনো বিকল্প নেই!

বাথান

সুবীর সরকার

 

সেই কবে থেকে বাথান খুঁজছি।

ভুল বানানের শহরে আবার জমে উঠছে

নাচের মহড়া।

জোকার হারিয়ে ফেলে

নদী হারিয়ে ফেলে

জলযান হারিয়ে ফেলে

আমরা ছুটে যাই

তাঁবু ও তেপান্তরের দিকে।

মায়ের অগ্নি

দেবাশিস তেওয়ারী 

 

যে অগ্নি জ্বালালে দুঃখ ঘোচে

অগ্নি সাক্ষী করে বিয়ে হয়

অথবা জঠরে জ্বলা অগ্নি নিয়ে প্রতিদিন বাঁচা।

বাবার রোজগার বলতে মাত্র কুড়ি টাকা

এর মধ্যে দিয়ে মা-কে ম্যানেজ করতে হত

আমাদের পড়াশুনো, কলেজ, লাইব্রেরি, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন

সবটাই মায়ের উপর।

বাবা চলে গেছে কবে চিতার আগুনে।

সন্ধের খড়কুটো হয়ে মা আজও আঁচলে আগলে রাখে পাখির সংসার।

আজও পূজাপাঠ, যজ্ঞ, আহুতিতে দাঁড়াই দু’হাতে

মন স্নিগ্ধ হয়ে আসে,

পবিত্র আগুন এখন ভিতরেই জ্বলে—

কেননা

মায়ের অগ্নি মৃত্যুকে অতিক্রম করে যেতে শেখায়।

 

ওরা

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

ওরা কি আছে যে হারাবে?
ওরা কি ছিল আমাদের পাশাপাশি কোনওদিন?
দৃশ্যমান খেলায় কিংবা রথের মেলায়
ইস্কুল কলেজ কাজ অকাজের নানান কিসিম ফিকিরে
ওদের দেখেছে কেউ?

চেনে কোনও পরিচয় চিহ্ন?
কোন রং ঢং বর্ণনা করেছে ওদের

জানা আছে কারো?
আশ্চর্য না বাচক আর এত দীর্ঘশ্বাস

কীসের জন্য তবে?
শূন্য থেকে শূন্যে যারা তাদের জন্য?
যারা আলোচ্য হতে চায়নি কোনও আঙ্গিকেই?

নীল মেঘের সমীকরণ
গণেশচন্দ্র রায়

পুরনো কবরের পাশে দাঁড়িয়ে পরজন্মের কথা
ভাবতে ভাবতে অন্ধকারের ভেতর এত আলো
জ্বালিয়ে দিয়ে যারা শ্মশানে পুড়ছে,
তাদের মধ্যে কেউ একজন হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে
পৃথিবীর বাইরের রাস্তায়।
এই ফাঁকে যদি ভিনগ্রহীরা ঢুকে পড়ে পৃথিবীর
মাটিতে, আর দখল করে নেয় পাপের সমস্ত
অস্তিত্ব, তখন আর দ্বিতীয় অন্ধকার বলতে কিস্যু
থাকবে না
সমস্ত  রাত ‘উলঙ্গ রাজার’ কাপড় খুঁজতে বেরিয়ে
পড়বে, শূন্য-শহরের দিকে
গাছের পাতায় সবুজ রোদের নদী, নীল মেঘের
সমীকরণ
সমুদ্রগর্ভ থেকে উঠে আসছে পুরাতন আগুনের
ঢেউ
এমন একটি বিধ্বস্ত দিনে —
পাহাড়ের নৌকা বানিয়ে চাঁদের স্টেশনে পৌঁছে
যাবে মাটির দেবতারা
আকাশ ভেঙে পড়বে কোন অলৌকিক আলোর
মাথায়।
উদ্বাস্তু হাওয়ার দাপটে অরণ্যের শেষ গাছটিতে
আশ্রয় নিয়েছে সময়
ধুলোর শহরে বোনা হচ্ছে স্বপ্নবীজ, দূষণের শব্দ
নেই তাতে
কাটা গাছের গোড়ায় বসে হাততালি দিচ্ছে মৃত
বাতাস।

Sabyasachi Bhattacharya
Sabyasachi Bhattacharyahttps://uttarbangasambad.com/
Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

সরকারি চাকরি মানেই শান্তির জীবন নয়

মানসী কবিরাজ অ্যালবামের পাতা ওলটালেই দেখা যাবে  আমাদের প্রায় ...

কবিতা

১ অ-কৃতজ্ঞ সোমা দে সভ্যতার ভেতরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা শরীর থেকে...

সোনার সংসার, যুদ্ধের সংসার

অরিন্দম ঘোষ বাংলায় ‘সোনার-সংসার’ বলে একটা শব্দবন্ধ আছে। এই...

গুজরাট যখন বাংলাকে মনে করায়

দেবদূত ঘোষঠাকুর  সম্প্রতি গুজরাটের পশ্চিম উপকূল ধরে ঘুরে একটা...