মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

কবিতা

শেষ আপডেট:

ক্যানভাস

অনুপ দত্ত

অভিমান সরিয়ে বরং লুকোচুরি খেলা হোক

এক তাল, দুই তাল এ  যেন তিন তালের খেলা

শাড়ির ভাঁজ থেকে গড়িয়ে পড়া ন্যাপথালিনের মতো

তুলে রাখো সব অবিশ্বাস

মনে রেখো বাঁশি বাজানোর আগে নিতে হবে দীর্ঘশ্বাস

ওপারে পৌঁছে গেলেই বেজে উঠছে বাঁশি

খেলা তখন শেষ…

কিশোরীবেলার গন্ধ মুছে গেলে পর

সুতনুকা বলে ডাকে গাঁয়ের লোক

সুন্দরীদের ডায়েরির পাতা খুলে বসে আছে রাক্ষুসে রাতের

ইশারা…

বাঁধন খুলে এপথ নেমে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে

তবুও তো শিকল ভাঙা তুষার ঝড়ে

ভেসে ওঠে আরও একবার তোমার মুখ

সন্দেহজনকের প্রতি

 বাসব দাশগুপ্ত

 

এত শান্তি চতুর্দিকে বুঝতে পারি আর যাই হোক এখানে ক্ষমতা নেই

অথবা নিদ্রিত আছে বলে পুলিশ ডাকেনি, চেনা রাস্তা দিয়ে ভ্যানগুলি

চলে যায়, শাসানির শব্দ কেন জানি ভিখ মেঙে খাওয়া করুণ বাঁশির

মতো দোল খায়, রাধে কৃষ্ণ বলে বলে নিরামিষ অন্ন খুঁজে ফেরে

 

ক্ষমতা তো  নাটক প্রিয়, ক্রমাগত বৃত্ত বাড়িয়ে গিলে খায় যতেক ক্যানভাস

তারপর তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে খুঁজে দেখে কতখানি জমে গেল সমর্পিতজন,

অথচ আমি তো জানি ক্ষমতার বৌ রাত জেগে সেলাই করার ফাঁকে

গুনগুন গান করে, কোথা থেকে বহু যুগ পরে উড়ে আসে উনুনের ধোঁয়া,

বেচারা ক্ষমতার চোখে কতদিন হয়ে গেল ঘুম নেই

 

অসহায় ক্ষমতাকে কী দিতে পারি, মেঘ দিয়ে গড়া ভঙ্গুর সিংহাসন অথবা

পালকের হাড়িকাঠ, কিংবা না লেখা বাংলা কবিতা, নেবে

 

নবজন্ম

বিধানেন্দু পুরকাইত

 

আমাকে যন্ত্রণার থেকে এত ভালোবাসা

কেউ দেয়নি

এতটা আপন ভেবে ভেবে জড়িয়ে ধরেনি

প্রেয়সীর ন্যায়– বলেনি কথা

যতটা চেয়েছে মন তার চেয়ে

আপন করেছে আপন ভেবে।

 

যন্ত্রণার শিকড়ে শিকড়ে

ফুল ফুটে ওঠে – চাঁপা জুঁই মাধবীলতারা

গাল টিপে সময়ে সময়ে আদর করলে

নবজন্ম হয়।

 

যন্ত্রণার বক্ষমূলে আজন্ম লালিত যে মন

কৃষ্ণের বাঁশি শুনলে পাগল হয়।

 

 

অবিকল

অনিমেষ

 

পাওয়া আর না পাওয়ার ভেতর

এক একটা মরূদ্যান রয়ে গেছে

যে জলের তুমি স্পর্শ পেতে চাইছ

সেখানেই আপাত নিষাদ।

 

এইসব সন্ধ্যাকালীন আড্ডা, বিষাদ, ছায়া ঘেরা কলতান পেরিয়ে

আমাদের আরও একটা সমুদ্র আবিষ্কারের কথা ছিল,

বিন্দু পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ফিরে আসি, গলদ্ঘর্ম হয়ে

 

যে মুখোশ আমি কিনে এনেছিলাম রাজাদের বাজার থেকে তাক লাগিয়ে দেব বলে

ঠিক অবিকল তুমি পরে এসেছিলে আমারই দরজায়!…

 

 

পরীক্ষাগার

শম্পা সামন্ত

 

আচম্বিতে মেঘ দেখে আর কত বৃষ্টির

অপেক্ষায় থাকব?

কতটা বিরক্তির পাশে নিঝুম দুপুরে গলে যাবে

অবান্তর প্রশ্নেরা?

হাত সাফাই-এর জাদু ও পকেটমারি আমি

জানি না।

তবু হিপ্নোটিজম সাজিয়ে নিচ্ছি লাইন বরাবর।

ইউ আর ইন আ কিউ এক সম্ভ্রান্ত শব্দ বিন্যাস।

অথচ পুজোর ফুলপাতা হাতে দাঁড়িয়ে ধৈর্যের বাঁধ

ভাঙছে।

 

খুব শীত করে এলে জ্বর আসে।

অতএব প্রভু, জ্বরের প্রকারভেদ ও মাহাত্ম্য

বিচারে আমি নাক গলাব না।

এখন এক ঘরানার ডাক শুনতে শুনতে সব

আবেদন সরে গেলে আমিও কি উহাদের মতো

পরমানন্দে হরি বলতে বলতে পরীক্ষাগারে ঢুকে

পড়ছি?

 

স্মৃতিচিহ্ন ও আত্মমগ্ন উচ্চারণ

রবীন বসু

 

দেখেছি জলের চিহ্ন অমলিন আছে

এদেশ ওদেশ নয়, চেনাজানা তীরে

আমাদের স্মৃতিচিহ্ন খেলা মাঠ ঘাট

অবিকৃত তারা আছে বুকের গভীরে!

 

বটফল হাতে নিয়ে ছুটেছি দুপুরে

কোথা থেকে ছুটে এলি দিনকানা তুই

ভেঙে গেল ফেটে গেল লাল বটফল

মুঠোতে দেখেছি তোর ধরা সাদা জুঁই!

 

স্মৃতি অ্যালবাম খোলে চিহ্নচূর্ণ দিন

কোথাও বিষাদ ঝোলে বিষণ্ণ আতর

মরে যাওয়া রাতের রূপকথা ছবি

দলিলে লিখেছে তাই সমস্ত স্থাবর!

দানপত্র লিখে রাখে কার্তিকের কাক

তীর্থস্থানে যেতে গিয়ে হারিয়েছি পথ

কোন মুখে চাঁদ দেখি, ছেড়ে যাব কাকে?

আমিও ভুলেছি যেন নিতান্ত শপথ!

কত দূর থেকে ডাক আসে প্রতিদিন

ঘুমের গভীর থেকে স্বপ্ন জাগে কই?

কুয়াশা মাঠের আলে কথা কেটে যায়

তমোঘ্ন আশার আলো জ্বলে ওঠে ওই!

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

শ্রীরামকৃষ্ণের গৃহদেবতার কথা

পূর্বা সেনগুপ্ত   তখন বৈষ্ণবদের ভক্তির রসে আপ্লুত, তন্ত্রের আচারে...

দীপার পাত্র

জয়ন্ত দে             দ্যুতিমানকে দুশ্চরিত্র কোন শালা বলে। দ্যুতিমান ভগবান...

শাপলা

মনোনীতা চক্রবর্তী             আরও একটা জন্মদিনের দিকে এগোচ্ছে  স্বচ্ছতোয়া। আরও...

১ আনমনা   সুব্রতা ঘোষ রায়    বসন্ত এসেছিল পলাশের ডালে, আনমনা মেয়ে তার কোন ব‍্যথা...