রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

কবিতা

শেষ আপডেট:

কে বলে দেবে

আনন্দ ঘোষ হাজরা

 

সমবেত মানুষেরা শোনো

ওভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থেকো না।

ওইভাবে ঘৃণাঝরা নয়নের সমাবেশ

আমাকে ভয়ার্ত করে দেয়।

করে দেয়, বিবশ বিহ্বল।

আমি কি কখনও কোনও মঙ্গলপ্রয়াসে

সচেষ্ট থাকিনি?

আমি কি কখনও কোনও প্রতিরোধে অভিমানে

শামিল হইনি, সাধ্যমতো?

আমি কি ঘৃণার যোগ্য? শুধুই ভর্ৎসনা পেতে

জন্ম নিয়েছি?

কে আমাকে বলে দেবে, জীবনের প্রান্তদেশে এসে?

 

 

ঈশ্বর ও ধর্ম 

কৌশিক জোয়ারদার

 

 

হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া দ্বিতীয় উপাস্য নেই—

এই কথা বাতাসে ছড়িয়ে পড়তেই

প্যালেস্তাইনের আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হল

এবং জান্নাতের প্রতিটি ফুল ভূমিস্পর্শ করার আগে

এক একটি শিশুর মাথায় বোমা হয়ে ফেটে গেল সশব্দে

কী রক্ত মাগো! অথচ আগামীকাল ভোরের প্রার্থনায়

তোমাকে ধন্যবাদ জানাবেন পৃথিবীর নিঃস্ব মায়েরা

কে বেশি সুন্দর হে অদ্বিতীয়- তুমি, না মানুষের ধর্ম

 

মহাবিদায়ের মাথুর

সুমন মল্লিক

 

ধৈর্যপাহাড়ে ধস নামার পর

শীতের বিকেলজুড়ে ছিল

বিন্দু বিন্দু উপসংহার আর

বুকভাঙা মহাবিদায়ের মাথুর

 

লেখার খাতার ওপর দিয়ে

এখন ধীর গতিতে ভেসে যায়

সেই বিকেলের মাতাল-মুহূর্ত…

দীর্ঘশ্বাসে ভরে ওঠে ঘর

 

ভাবতে অবাক লাগলেও

একথা অস্বীকার করা যায় না

এতগুলো বছর পার করে

আজও চোখভর্তি মোহের বালি

 

একেকটি কবিতা লেখার পর

মনে হয়, নিজেকে খুন করলাম

 

প্রাচীন ভারতবর্ষে 

 

রজতকান্তি সিংহচৌধুরী

 

প্রেয়সীর চোখে কর্ণোৎপলরেণু

পড়েছিল, তাতে ফুৎকার দিতে গিয়ে

এল দক্ষিণা, বাজে শাশ্বত বেণু।

মুখকমলের আঘ্রাণটুকু নিয়ে

 

মাতাল ভ্রমর ক্ষান্ত হবে কি আজ?

সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে চেয়ে

মাধবীর আগাপাশতলা ফুলসাজ

আসে বুঝি ভরা ঋতুর নৌকা বেয়ে।

 

যে নিজে বিবশ, সে কি করে প্রতিরোধ?

সুখস্পর্শ কোমল রত্নটি ও

আগুন ভাববে তাকে কোন নির্বোধ?

পরম যত্নে অঞ্জলি ভরে নিও!

 

রত্ন তো কারও করে না অন্বেষণ

রত্নের খোঁজই সক্কলে করে থাকে

আতপত্রে কি জ্যোৎস্নার নিবারণ

করা চলে? শোনো, কোলে তুলে নাও তাকে!

 

দূরবিনে ব্রহ্মজ্ঞান

 

পার্থ চৌধুরী 

 

দু’আঁজলা জীবন পান করে

লাশ উঠে দাঁড়াল টানটান

হনহন করে সোজা হেঁটে

গনগনে আগুনে ঢুকে পড়ল

আগুন গলে জল

জল সময়ের তাপে হিমায়িত

স্বচ্ছতার গভীরে স্পষ্ট ভাসে

পৃথিবীর বিবর্ণ ফসিল

 

 

স্বরলিপি

অপর্ণা বিশ্বাস মজুমদার

 

দীর্ঘ নীরবতা শেষে তোমার স্বর ছুঁয়েছিল আমার

স্বরলিপি।

তখন রাত্রি নিকষ কালো চোখের আড়ালে

অনন্ত নক্ষত্র বীথি

সুযোগসন্ধানী অন্ধকার তোমাকে আরও অরণ্য

করে তুলেছিল সেদিন

করতল মেখেছিল ঢেউয়ের সুগন্ধি!

আমারও শৃঙ্গার বলতে কাচপোকার টিপ;

বালুতটে লুকোনো ঝিনুক

 

তুমি চোখের পাতায় সমুদ্র আঁকলে

আহিরভৈরবী রাগে!

গলায় পরিয়ে দিলে বৃষ্টির হাঁসুলি

তোমার নুড়ি পাথর গল্প কথাগুলি অলংকারে

ঢেকে দিল আমার পাতার পোশাক।

আমি বদ্বীপ হলাম তোমার জোনাক অনুরাগে।

 

পুরোনো পাতার মতো ঝরে পড়ল গতজন্মশোক

 

অবয়ব

ব্রততী দাস

 

ঘষা কাচে আবছা ছায়ামূর্তি।

তোমার চোখের ছবি আঁকিনি কখনও,

তবে অবয়ব আমার ক্যানভাসে স্পষ্ট।

সমস্ত রং ধুয়ে যাবার পরও

আলো ছায়ায় শরীরী ভাঁজের মায়া আবিষ্ট।

অলস দুপুর গড়ায় আমার বসন্ত বেলায়;

ফুলের আগুনে দগ্ধ ভ্রমর,

আর পাখির ডুবসাঁতার।

সূর্যের আলো ধীরে ধীরে তির্যক হয়ে আসে,

আমি হারিয়ে যাই গভীর থেকে গভীরে।

কৃষ্ণচূড়ার পাতার ফাঁকে উঁকি দেয়

এক চিলতে আকাশ।

আর আমি খুঁজে বেড়াই তোমার অবয়ব…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

সরকারি চাকরি মানেই শান্তির জীবন নয়

মানসী কবিরাজ অ্যালবামের পাতা ওলটালেই দেখা যাবে  আমাদের প্রায় ...

কবিতা

১ অ-কৃতজ্ঞ সোমা দে সভ্যতার ভেতরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা শরীর থেকে...

সোনার সংসার, যুদ্ধের সংসার

অরিন্দম ঘোষ বাংলায় ‘সোনার-সংসার’ বলে একটা শব্দবন্ধ আছে। এই...

গুজরাট যখন বাংলাকে মনে করায়

দেবদূত ঘোষঠাকুর  সম্প্রতি গুজরাটের পশ্চিম উপকূল ধরে ঘুরে একটা...