কবিতা

শেষ আপডেট:

অ-কৃতজ্ঞ

সোমা দে

সভ্যতার ভেতরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা

শরীর থেকে খুলে নিয়েছি পোশাকি বন্ধুত্বের চিহ্ন

রোজকার দহন গায়ে মেখে এগিয়ে চলি গন্তব্যের দিকে

রোদ চশমার আড়ালে সন্তর্পণে লুকিয়ে রাখি বিষাদ সিন্ধু

 

উপকারের প্রতিদানে কোঁচড় ভরে গেছে অভিযোগে

আপাতত ঠোঁটে কুলুপ এঁটেছে প্রত্যুত্তর

এঁটেল মাটির বুকে ক্রমশ পুরু হচ্ছে অশ্মের আস্তরণ ..

 

পার্শ্ববর্তী অবস্থানে থাকা সকলেই মানুষ নয়,

বুর্জোয়া জীব অথবা ছদ্মবেশী দুর্জন।

 

 

ঠিকানা

অমিত রায়

তোমায় আমি কী-ই বা দিতে পারি

ছোট্ট নদী, বাঁশের সাঁকো— আত্ম-অহংকারী

সময় ভীষণ দামি। সময় হাঁটুক ধীরে

কংক্রিটের জীবনরেখা! আশ্লেষে হৃদয় চিরে।

কাছের মানুষ ফিরে আসুক… আসুক ফিরে।

 

তোমায় দোব অনেক কিছু

একটা বিকেল চোখের জলে; মেঘের বাড়ি নীচু

কোন মেঘেরা ভিনদেশি গো? নেই তো জানা

সহসা আবার দেখা পেলে রাখব ঠিকানা।

 

 

 

রোদের খবর

দীপান্বিতা রায় সরকার

 

পাখির চোখ এফোঁড়-ওফোঁড়

কোথায় সে ধ্রুবক বাণ?

সে বোধ আর জাগল কোথায়!

যেখানে সব আয়ুষ্মান।

 

এই যে ভীষণ ক্রান্তিকালে,

ফুরায় আয়ু ঘনায় ঘুম।

বরফ কঠিন জমাট ঘৃণায়

যুগলবন্দি এ  মরশুম।

 

তোমার কখন সময় হবে?

রোদ লেফাফায় খবর দাও

আমাদের শৈত্য শহর

প্রবল শীতে কম্পমান।

 

আমরা শুধুই ক্ষয় দেখেছি,

ঘুণপোকাদের ঘর দেখেছি বৃক্ষমূলে,

শুদ্ধ সহজ, আবার কবে? নতুন করে

সবুজ পাতার উপত্যকা আমার হবে?

 

 

সহিষ্ণুতার মন্ত্র

রুমি নাহা মজুমদার

 

 

সন্ত্রাসী মনে বাড়ছে অসন্তোষ

আতশকাচে দেখতেই পারো দোষ।

 

তোমার সনে নেই তো আড়াআড়ি

যে যার মতন ফিরছি আপন বাড়ি

 

চলতি পথে হোঁচট লাগলে পরে

কেউ কখনও আগলাবে হাতে ধরে?

 

তাই যদি না পারো তুমি কোনও

হাজার পাঠেও শুধরোবে না যেন

 

মানবতার বিপুল হিসেব কষে

অঙ্ক মেলাও সে কি ধর্ম বশে?

 

ধর্ম ধর্ম করে অধর্ম হয়

জীবন পথে এমনি করেই আসে বিপর্যয়

 

তাই বলে কি শিখবে না আর ক্ষমা ধর্ম কথা

সহিষ্ণুতার মন্ত্রেই আছে ভালোবাসার সোঁতা।

 

বৈবাহিক

অমিতাভ সরকার

যত এগোচ্ছি সময়টা হাত থেকে…

ইচ্ছের লুকোনো বয়সে মোচড় দিচ্ছে চিন্তা

 

নদীর সব পাহাড়েই বরফ জমা কুয়াশা

 

আলো দেখেও আকাশটা যে কী ভাবছে বুঝি না

 

সবই কেমন-

 

জানলা খুললেও গায়ে জামা দিয়ে রাখতে হয়

 

কাল রাতের বৃষ্টির পর

ভোরের হাওয়াটা খুব ঠান্ডা।

 

 

হৃদিস্রোতা

দেবার্ঘ্য সাহা

একটা গোলাপ একফালি দিন সহস্র রাত

একটা গোলাপ বুক চিনচিন জলপ্রপাত

একটা গোলাপ  অতলস্মৃতি, টুকরো কথা

একটা গোলাপ বীরুৎ জীবন খরস্রোতা

একটা গোলাপ মনকেমনে বায়নাবিলাস

একটা গোলাপ আগলে রাখে বিষণ্ণ মাস

একটা গোলাপ লিখছে চিঠি মন খারাপে

একটা গোলাপ একলা ঘরে দুঃখ মাপে

একটা গোলাপ চাইছে তোকে যখন-তখন

একটা গোলাপ প্রতিদিনের মন উচাটন

একটা গোলাপ বুনতে থাকে এই কবিতা

সেইখানে তোর নাম রেখেছি হৃদিস্রোতা

 

কথার পালক ভাসিয়ে নীলে, আসবি কবে?

এই বসন্তে এবার বোধহয় বৃষ্টি হবে…

 

 

কাল্পনিক

 

তাপসী লাহা

 

ক্রমশ এগোয় রাতের শব্দ

 

গান ফেররি করে নেড়িদের দল।

 

দু’-একটা পেরিয়ে যাওয়া বাহন নিরুদ্দেশ হবে বলে

হর্নে আব্বুলিশ বাজিয়ে চলে গেল এইমাত্র

 

বিশ্রামের মোহপর্বে জেগে থাকবে মহীয়সী তারারা

 

আকাশের সূচিপত্রে তখন ক’পশলা গা ছেঁড়া মেঘ,

 

নিস্তব্ধ চাহনিতে ভরাট করে ফেলেছে

খোপ কাটা রাত বিষয়ের হাতলেখায়..

 

তারপর এক সংক্ষিপ্ত বৈঠক সেরে নেয় পরিত্যক্ত সড়কেরা।

 

ভোটদাতার তালিকায় নথিবদ্ধ হয়নি ওদের নাম।

 

কালো পালকের ভাড়াটে পোশাক পরা

এক কাক মামলা লড়ার প্রতিশ্রুতি দিলে

 

সড়কেরা সাগ্রহে ধর্নায় শুয়ে পড়ে খোলা আকাশের নীচে,

 

পোশাকি প্রেমে আদিগন্ত সড়কেরা আকাশের মতো কোনও নীল কাল্পনিক।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

More like this
Related

বোধ

তমোনাশ দে সরকারভবা পাগলা। পাগলই বটে। সামান্য...

ছায়ারূপ  

সুনন্দ অধিকারীঘষাকাচ। সেই কাচের ওপর গাছের ছায়াটা পড়ছে।...

কমলাকান্ত কালী

পূর্বা সেনগুপ্ত  সদানন্দময়ী কালী মহাকালের মনমোহিনী। তুমি আপনি নাচ, আপনি...

কবিতা

১ঝড়কালীকৃষ্ণ গুহ আমাকে প্রশ্ন করেছিলে  --ভেবেছিলে,আমি উত্তর দিতে পারব। পারিনি। সেদিন দেখলাম,একজন...