সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

কবিতা

শেষ আপডেট:

মৃত্যু

সুমন মল্লিক

 

সেদিন কী উথালপাতাল! দ্রিমিকি দ্রিমিকি বুক ভ’রে বেজেছিল চুপকথা

দু-কোটি হাতে জড়িয়ে রেখে বিদায় আকাশের মেঘে স্বাক্ষর করেছিলাম

সারিবদ্ধ ঝাউগাছেরা ভোলেনি নিশ্চয়ই জামার নীচে আহত মনের গান

লাভাগ্রস্ত মনে হয়েছিল লোকালয়, অস্তগামী সূর্যে কুঠার চলেছিল ব্যথার

সে বড় বিচিত্র একটি দিন, যার মাঝে আজও মাদুর পেতে বসি নিশ্চুপ

অঙ্গহানির মতো সেই বিদায়, যা একাধারে বিচ্ছেদ আর পুনঃপুন মৃত্যু

 

সরীসৃপ

কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়

 

ফেলে আসা শ্রাবণের

চোখ বরাবর দাঁড়িয়ে পড়ি;

অথচ অবসন্নতার পাশে পড়ে থাকা

হাহাকারের ময়লাটুকু

সরানো আমাদের শপথ ছিল।

পড়ন্ত বিকেলের রোদ মুছে গেলে

চাঁদের গায়ে ফুটে উঠত গদ্যময় উঠোন।

এখন অপঠিত জ্যোৎস্না সব –

বর্ষাও এসে কেঁদে চলে যায় অবিরাম।

ভরা বসন্তের সীমানা জুড়ে

উদাসীনতার বয়াম খুলে বসি;

নির্বিবাদী মন নিয়ে কিছু গোছানো সংলাপ,

বাকি হিংস্রতার ফণা তুলে থাকা সরীসৃপ সময় –

যার পরতে পরতে জটিল রাস্তায়

খুন হয়ে পড়ে থাকা

আততায়ীর হাতের সম্পর্কের যাবতীয়…

 

একটি লেখা

জয়দেব চক্রবর্তী

কত উচ্ছেদের বিনিময়ে
তৈরি এক ভ্রমণের দেশ

গোপন করে রেখেছে যার
অশ্রুধারা, দগ্ধ স্মৃতিকথা

তুমিও এসেছ তার কাছে
ঝলমলে পোশাকে, সজ্জায়

তার মতো উদ্দেশ্যপ্রবণ
ভুলে যেতে চাইছ সবটাই

যে তার ছদ্ম ধারণা  দিয়ে
শুরু করে  সময় গণনা

বুঝতে পারে না সেসবের
উত্তরে থাকে খণ্ড চেতনা

কেন তুমি না খুঁড়ে কালকে
না জেনে স্তব্ধ দিনের কথা

কাকে বলো পরিণাম আর
কার সঙ্গে মিশে যেতে চাওয়া

জন্ম প্রতিমার হাতে বুঝি
কখনও স্থির থাকে জল

যদি থাকে, তবে তাকে পায়
গোধূলির লুণ্ঠিত আঁচল

এমন অস্থির দিনে দেখো
যেখানে ভেঙেছে যত ঘুম

তোমাকে তোমার মতো চিনে
আমি চিনি নিহত কুসুম

 

স্মৃতি

পার্থপ্রতিম মজুমদার

স্মৃতির ভিতরে কার পদছাপ, কার?

কে শুধু আঁধার করে আসে?

কে আমার দুখজাগানিয়া?

কে তবু আমার কাছে আসে!

প্রশ্ন, প্রশ্ন শুধু

উত্তর কে যে দেবে আর?

বিকেল-রঙের সেই পাখি

স্মৃতিসরণিতে তবু আসে

আসে আর কথা বলে যায়

কথার ভিতরে কত কথা

পুড়ে মরে… ধোঁয়া ওঠে… হায়…

 

 

মন ঃ গ্রাফ

উর্বশী বন্দ্যোপাধ্যায়

 

প্রত্যেক মনের একটা ব্যথা ঘর থাকে।

কখন কোন রান্না বাটি  মুহূর্তে যে-

সে ঘরের দরজা খুলে যায়,

কেউ বলতে পারে না।

আষাঢ়ের ব্যস্ত আকাশের জ্যামে

বিরক্ত মেঘেদের মতো

থমকে দাঁড়ায় তখন মন।

ঘরের ভেতর সুপার সাইক্লোন।

দু’আঙুল ভুল তখন নিমেষে একশো হাত,

পলক না পড়তেই পেরিয়ে যায়

পৃথিবীর শেষ গিরিখাত।

ঝড়ের পর দিন

পাঁচ ব্যাটারির টর্চ দিয়ে খুঁজেও

ঘরে

এক টেবিল চামচ সান্ত্বনা পাওয়া যায় না।

 

হলদে ফুলের বাহার 

শ্রেষ্ঠা সরকার

 

মাতলা নদীর ধারে, হলদে ফুলের বাহার আছে।

লাবণ্য যেন আকাশছোঁয়া,
দিগন্তে কমলা রঙের সাথে তার ভাব বটে।

ফুটফুটে সাদা রাজহাঁস আর একদল পায়রা সন্ধি করে,

কালচে ধূলির মরশুমে বরং নিজেকে আগলে রেখো,

নতুন কোনও ক্ষণে আবার হলদে ফুলের বাহার এনো।

Sabyasachi Bhattacharya
Sabyasachi Bhattacharyahttps://uttarbangasambad.com/
Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

সরকারি চাকরি মানেই শান্তির জীবন নয়

মানসী কবিরাজ অ্যালবামের পাতা ওলটালেই দেখা যাবে  আমাদের প্রায় ...

কবিতা

১ অ-কৃতজ্ঞ সোমা দে সভ্যতার ভেতরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা শরীর থেকে...

সোনার সংসার, যুদ্ধের সংসার

অরিন্দম ঘোষ বাংলায় ‘সোনার-সংসার’ বলে একটা শব্দবন্ধ আছে। এই...

গুজরাট যখন বাংলাকে মনে করায়

দেবদূত ঘোষঠাকুর  সম্প্রতি গুজরাটের পশ্চিম উপকূল ধরে ঘুরে একটা...