শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : সময়ের সঙ্গে আধুনিক হচ্ছে চোরেরাও! আর সেই আধুনিক চোরেদের বাগে আনতে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। চুরির ধরন দেখে অনায়াসেই ‘দাগি চোর’-কে পাকড়াও করা গেলেও ‘স্পিকটি নট’ তারা। আবার থার্ড ডিগ্রিও দেওয়া যাবে না, তাও বেশ জানে পেশাদার চোরেরা। ফলে তাদের দিয়ে অপরাধের কথা স্বীকার করাতে কার্যত হাতেপায়ে পড়তে হচ্ছে তদন্তকারীদের।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি। কিন্তু সেই প্রযুক্তির গ্যাঁড়াকলও আছে বেশ। কথা হচ্ছিল শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের এক এসআই-এর সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘এই যেমন সেদিন এক চোর বলে বসল, আমি যে চুরি করেছি, তার কী প্রমাণ আছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখান। পড়া গেল ঝামেলায়। সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজতে গিয়ে তো মাথায় হাত। ওই বাড়িতে সিসিটিভি থাকলেও তাতে রেকর্ড হয়নি কিছুই। অগত্যা সন্দেহভাজন চোরকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকল না।’
এমন ঘটনা ঘটছে হামেশাই। সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় প্রায়শই মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়েও যাচ্ছে চোরেরা। পরিস্থিতি এমনই যে, আধুনিক চোরেদের বাগে আনতে এখন শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকার অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে গিয়ে সিসিটিভি লাগানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং বলছেন, ‘চুরির ধরন, বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, কে চুরি করেছে। তবে চুরির ক্ষেত্রে চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার করাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে সিসিটিভি থাকলে সুবিধা হয়।’
চোরেদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্কটা দীর্ঘদিনের। সম্পর্ক এমনই হয়ে যায় যে, অনেক সময় চুরির ধরন দেখেই পোড়খাওয়া পুলিশকর্তারা বুঝে যান, কাজটা আসলে কার। কিন্তু আইন তো বয়ানের ওপরই নির্ভরশীল। সেখানে সন্দেহের কোনও জায়গা নেই। আধুনিক চোরেদেরও সেটা এখন ভালোভাবেই জানা। তাই গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে পাকড়াও করলেও ভালো হোক কিংবা কড়া কথা হোক, মুখে কুলুপ এঁটে থাকছে সময়ের সঙ্গে আধুনিক হয়ে পড়া চোরেরা।
সম্প্রতি বেলডাঙ্গিতে একটি ফাঁকা বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। চুরির ধরন দেখে এক চোরকে পাকড়াও করে পুলিশ। তদন্তকারী ওই পুলিশকর্তা বলছিলেন, ‘ওই চোরকে যতবারই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছিলাম, ও কিছুতেই স্বীকার করছিল না। শেষমেশ সিসিটিভির খোঁজ শুরু করি। এরপর এলাকার একটি দোকান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়ার পর সেটা দেখাতেই মুখে লজ্জার হাসি ফুটে ওঠে ওই চোরের।’ একই ঘটনা ঘটে, পতিরামজোতে একটি বাইক চুরির ঘটনাতেও। চোরকে ধরার পর, কিছুতেই সে স্বীকার করবে না। একেবারে ‘স্পিকটি নট’, শেষমেশ এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজই হয়ে দাঁড়ায় চোরের মুখ খোলার অস্ত্র।
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘আসলে এরাও বুঝে গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ না দেখালে গতি নেই। তাই যতক্ষণ না ফুটেজ দেখানো হচ্ছে, ততক্ষণ কেউ চুরির কথা স্বীকার করছে না।’
এই পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে সিসিটিভি লাগানোর জন্য সোসাইটিগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করে ফেলেছে পুলিশ। কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট সিসিটিভি লাগানোও শুরু করেছে। কিন্তু বাকিরা যতদিন না পুলিশের আবেদনে সাড়া দিচ্ছে, ততদিন এই চোরেদের পোয়াবারো।