উত্তর সম্পাদকীয়

শরিকদের মোছার কাজ শুরু সিপিএমেরই

 

  • প্রবীর ঘোষাল

একসময় সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনকে ঘিরে শুধু রাজ্যে নয়, দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘টাগ অফ ওয়ার’ এই ইস্যুতে তুঙ্গে উঠেছিল। দু’পক্ষই ছিল অনড়। এই সংকটের মিটমাটের চেষ্টায় মাঠে নেমেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্ণধার অশোক ঘোষ। নিজের উদ্যোগে তিনি মমতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। অশোকবাবুর আহ্বানে কালীঘাটের নেত্রী সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের বামফ্রন্টের শরিক দলের অফিসেও গিয়েছিলেন। একাধিকবার অশোক-মমতা বৈঠক হয়েছিল।

শেষমেশ মধ্যস্থতার ফলে মহাজাতি সদনে সরকার এবং মমতাকে নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। যদিও আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অনেক নেতাই চাইছিলেন না, অশোকবাবুর উদ্যোগ সফল হোক। তাতে সিপিএমের চেয়ে বাজারে ফরওয়ার্ড ব্লক মাইলেজ পেয়ে যাবে। ইতিমধ্যে বামফ্রন্টের শরিক দলগুলিকে মন্ত্রীসভায় রেখে গ্রামেগঞ্জে পিষে মেরে ফেলার চেষ্টা সিপিএম পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছিল।

আর একটা ভাবনাও সিপিএমকে প্রভাবিত করেছিল। মমতা তখন তাদের পয়লা দুশমন। এমন কোনও সিদ্ধান্ত যাতে না হয়, যাতে মমতা রাজনৈতিক সুবিধা পেয়ে যায়। এই দ্বিমুখী লক্ষ্যে আলিমুদ্দিন চায়নি, মহাজাতি সদনের বৈঠক সফল হোক। তাই তারা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠায়নি। তার জায়গায় এসেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী। ঠোঁটকাটা রাজনীতিবিদ হিসাবে শ্যামলবাবুর বেশ নামডাক ছিল।

বৈঠক চলাকালীন একসময় তিনি মমতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি শিল্পের কী বোঝেন? আপনার জন্যই তো…’ শ্যামলবাবুর কথা শুনে রাগে অগ্নিশর্মা মমতা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। অশোকবাবু সহকর্মী তরুণ ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়কে বলেন, ‘মমতাকে চলে যেতে দিও না, ধরে আনো।’ না, মমতাকে আর ফেরানো যায়নি।

এই ঘটনা সবিস্তারে এতদিন পরে ফের বলতে হল, সিপিএম বামফ্রন্ট শরিকদের কী চোখে দেখত, তার একটা দৃষ্টান্ত ছিল সেই বৈঠক। ষাটের দশক থেকেই শরিকদের সঙ্গে জোট বাঁধলেও, সিপিএম সবসময় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে সক্রিয় ছিল। যুক্তফ্রন্টের আমল থেকেই শরিকি বিবাদ এবং রক্তক্ষয়ী সম্পর্কের শুরু। ১৯৭৭ সালে নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর জ্যোতি বসু এবং প্রমোদ দাশগুপ্ত ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই, আরএসপির মতো দলগুলি তো বটেই, বামপন্থী অন্যান্য দলগুলিকেও যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন। মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক, আরসিপিআই, বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস, সোশ্যালিস্ট পার্টির মতো দলগুলিকে বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় ঠাঁই দেওয়া হয়েছিল। তেরো পার্টির বামফ্রন্ট সরকার তখন রমরমিয়ে চলছে।

 শরিক দলগুলিকে পরবর্তী সময়ে খতম করার পরিকল্পনাও নিয়েছিল সিপিএম। বছর দশেক কাটতে না কাটতেই বড় শরিক স্বমূর্তি ধারণ করে। তারা বুঝে যায়, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। শরিকদের নিকেশ করতে পারলে সিপিএমই হবে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। সেইমতো অপারেশন শুরু হয়। মন্ত্রীসভায় শরিক দলের মন্ত্রীদের গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামেগঞ্জে পুলিশের প্রচ্ছন্ন মদতে শরিকদের উপর হামলা-হাঙ্গামা বাড়ানো হয়। যেমন উত্তরবঙ্গে দিনহাটায় সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লক, দক্ষিণবঙ্গে বাসন্তী-গোসাবায় আরএসপি-সিপিএম সংঘর্ষ প্রায়শই সংবাদের শিরোনাম হয়।

বামফ্রন্টের শরিকি বিরোধ প্রকাশ্যে কদর্য চেহারা নেয় পূর্তমন্ত্রী যতীন চক্রবর্তীর বিতর্কিত ‘নোট’ নিয়ে। বেঙ্গল ল্যাম্প সংস্থাকে অর্ডার পাইয়ে দেওয়া নিয়ে যতীনবাবুর নোটের সারমর্ম ছিল, ‘চন্দন বসু এসেছিলেন। তাঁর অনুরোধে বেঙ্গল ল্যাম্পকে কাজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে।’ নোটে না বলে পরে মুখে পূর্তমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জ্যোতি বসু ফোন করে অনুরোধ করেছিলেন, চন্দন যাচ্ছে। ব্যাপারটা একটু দেখে দিতে হবে।’

এই ঘটনাকে ঘিরে সিপিএম-আরএসপির বিরোধে যতীনবাবুকে নতিস্বীকার করানো যায়নি। সেই বিতর্কের সময়ে বর্ষীয়ান আরএসপি নেতা মাখন পাল নিয়েছিলেন মস্ত বড় ভূমিকা। তিনি নানাভাবে চেষ্টা করেছিলেন, ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে, কিন্তু পারেননি। স্বাধীনতা আন্দোলনে মাখনবাবুর মতো জেল খেটেছিলেন যতীনবাবু। পরে নামই হয়ে গিয়েছিল ‘হরতালদা’। কিন্তু বেঙ্গল ল্যাম্প ইস্যুতে তাঁকে কার্যত নির্বাসিত হতে হয়েছিল। আরএসপিতেও থাকতে পারেননি।

যতীনবাবুর পরিণতি আর এক বাঘা বাম নেতার হয়েছিল। নারায়ণ চৌবে। অবিভক্ত মেদিনীপুর ছিল সিপিআইয়ের শক্ত ঘাঁটি। মেরে -পিটিয়ে শরিকদের সেই ঘাঁটি তখন দখল করতে চাইছিল সিপিএম। জ্যোতিবাবুদের স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নারায়ণবাবু। আর সিপিএমের অত্যাচারের কাছে নতজানু না হয়ে নারায়ণবাবু মাথা তুলে লড়াই করেছিলেন। তিনি ছিলেন লোকসভার সদস্য। কিন্তু তাঁকেও সর্বহারা হয়ে সিপিআই ছাড়তে হয়েছিল।

মেদিনীপুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যখন সিপিএম নির্বিচারে পেটাচ্ছে সিপিআই কর্মী-সমর্থকদের, তখন কিন্তু ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়, গীতা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ পার্টির নেতা-নেত্রী বেঁচে। তাঁরা কোনও কোনও সময় প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। বামফ্রন্টের বৈঠকেও হয়তো মাঝেমধ্যে সরব হতেন। ওই পর্যন্ত। শরিকরা মন্ত্রিত্ব এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা ভোগ করতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বড় শরিকের যাবতীয় লাঞ্ছনা-গঞ্জনা তারা কার্যত মুখ বুজেই সহ্য করেই এসেছিলেন।

আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআই মন্ত্রীদের দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছেঁটে দিল সিপিএম। তাতেও তাদের মুখে রা নেই। আরএসপির ক্ষিতি গোস্বামীর ছিল পূর্ত দপ্তর। তাঁর রাস্তাঘাট সহ নির্মাণ প্রকল্পের অর্ডার দেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন দে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী। বাজেটে কৃষিকাজে বরাদ্দ টাকা সরাসরি জেলা পরিষদে পাঠানোর নির্দেশ জারি করেছিল জ্যোতিবাবুদের সরকার। ততদিনে শরিকদের একঘরে করে রাজ্যের সবক’টি জেলা পরিষদে সিপিএম একচ্ছত্র ক্ষমতা কায়েম করেছিল। আসলে আলিমুদ্দিন কর্তাদের ধারণাই হয়ে গিয়েছিল, আর কোনওদিন রাজ্যপাট থেকে কেউ তাদের সরাতে পারবে না।

তবে বামফ্রন্টের নেতাদের মুখেই শুনেছি, জ্যোতিবাবু কিছুটা হলেও শরিকদের সমীহ করতেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর সিপিএম নেতাদের শরিকদের তুচ্ছজ্ঞান করার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। ৯০ দশকে একবার সিপিএম-আরএসপির মধ্যে প্রকাশ্যে কাজিয়া বেধেছিল। একদিকে বিমান বসু, অন্যদিকে ক্ষিতি গোস্বামী। জ্যোতিবাবু দুজনকে আলাদা করে ডেকে রাগত স্বরে বলেছিলেন, ‘ওহে তোমরা কেন ভাবছ এটা সিপিএমের একার সরকার? বামফ্রন্ট চলবে সব শরিক দলগুলিকে নিয়ে।’

আর বুদ্ধদেববাবুর আমলে শরিকদের অভিজ্ঞতা অনেক তিক্ত। বামফ্রন্টের বৈঠকে যখনই আরএসপি-ফব-সিপিআই কোনও বিষয়ে বড় শরিকের দিকে আঙুল তুলত, তখনই অন্য ছোট শরিক দলগুলি তাদের গর্জন থামিয়ে দিত। আসলে কার্যত সাইনবোর্ডহীন দলগুলিকে মন্ত্রিত্ব এবং অন্যান্য সুবিধা দিয়ে সিপিএম নিজেদের আজ্ঞাবহ করে রেখেছিল।

২০০৮ সালে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম প্রথম টের পেল, বাংলার মাটি তাদের দুর্জয় ঘাঁটি নেই। বরং প্রধান শত্রু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস অনেকটা মাটি দখল করে দ্রুত এগোচ্ছে। এক বছর পরে লোকসভা নির্বাচনে জোট গড়ে তৃণমূল এবং এসইউসি পেল ২৬টি আসন। আরও ভাবুন কী দ্রুত পট পরিবর্তন!

২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে পাকাপাকি পরিবর্তনের পর সিপিএমের যাবতীয় সংগঠন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে গেল। শরিকদের অবস্থা আরও খারাপ হল। সেটাই ছিল তাদের স্বাভাবিক পরিণতি। কারণ, বামফ্রন্টের শরিকরা তো পুরোপুরি সিপিএম নির্ভরশীল হয়েছিল। এখনও বামফ্রন্ট আছে। কিন্তু বড়, সেজো, মেজো সব শরিকই ধুঁকছে। তবুও, নির্বাচন এলে শরিকি কাজিয়া দেখা যাচ্ছে। সিপিএম আবার একসময়ের তাদের প্রধান শত্রু কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়েছে। সেটা সব শরিক মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু শরিকদের আজ তো রাজ্যে কোনও প্রভাব নেই, সংগঠনও নেই।

পুরুলিয়া একসময় ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত ঘাঁটি। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তাদের প্রার্থী ওই কেন্দ্র থেকে লোকসভায় গিয়েছেন। এবারে সিপিএম আসনটি ছেড়ে দেয় জোটসঙ্গী কংগ্রেসকে। কিন্তু ফরওয়ার্ড ব্লক সেই সিদ্ধান্ত মানেনি। তারা পালটা প্রার্থী দেয়। যথারীতি এবারও পুরুলিয়া জয় করেছে বিজেপি। সামান্য ভোটে হেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তৃতীয় কংগ্রেস। ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো ভোট পেয়েছে তারা। আর ফরওয়ার্ড ব্লকের জুটেছে সাড়ে ১৪ হাজারের মতো ভোট। তবে বামফ্রন্টের শরিক হিসাবে ফরওয়ার্ড ব্লকের সান্ত্বনা হল বারাসত কেন্দ্র। সেখানে তৃতীয় হলেও, তারা পেয়েছে ১ লক্ষ ভোট।

ভোট মেটার পর প্রকাশ্যে না হলেও, বামফ্রন্টের অন্দরে নানা বিতর্ক। শরিকদের কেউ কেউ সিপিএমের অতিমাত্রায় কংগ্রেসি নির্ভরতা নিয়ে সমালোচনায় মুখর। আবার শরিকরা বুঝতে পারছে না, ঠিক কোন পথে এগোলে, বিজেপিকে সরিয়ে তারা তৃণমূলের প্রধান বিকল্প হতে পারবে। আসলে সিপিএমের মতোই দিশেহারা বামফ্রন্টের শরিকরাও। একসময়ের তাদের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে এখনই পার্টি অফিসের তালা খোলার লোক নেই। বড় শরিকদের চেয়ে তাদের হাল আরও করুণ।

(লেখক সাংবাদিক)

Uttarbanga Sambad

Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Recent Posts

Uttar Pradesh | সমকামী সম্পর্ক স্থাপনে নারাজ বৌমা, ব্লেড দিয়ে ফালাফালা করে দিল শাশুড়ি

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: পুত্রবধূকে সমকামী(Homosexual) সম্পর্কে জোর করেছিল শাশুড়ি। আর তাতেই আপত্তি করায় ব্লেড…

26 mins ago

নাটক না লিখেও রঙ্গমঞ্চ মাতিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র

অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য বিনোদিনী দাসী লিখেছিলেন, ‘বঙ্কিমবাবু মহাশয় নিজে বলিয়াছিলেন যে- আমি মনোরমার চিত্র পুস্তকেই লিখিয়াছিলাম,…

38 mins ago

দেহত্যাগের আগে এখন পদত্যাগ নয়

আশিস ঘোষ নৈতিকতা। ছোট্ট কিন্তু প্রচণ্ড ভারী একটা শব্দ। এ যুগে অতি বিরল। খুঁজেপেতে বের…

50 mins ago

Inzamam-ul-Haq’s bizarre claim | আর্শদীপের বিরুদ্ধে বল বিকৃতির উদ্ভট অভিযোগ ইনজামামের

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: এবারের টি২০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে পাকিস্তান। কানাডা, আয়ারল্যান্ডের…

59 mins ago

Neora Valley National Park | নেওড়াভ্যালিকে গুরুত্ব দিতে নতুন অফিস লাভায়

পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: কালিম্পং পাহাড়ের নেওড়াভ্যালি জাতীয় উদ্যানকে (Neora Valley National Park) বাড়তি গুরুত্ব দিতে…

59 mins ago

Child Trafficking | বাজারের ব্যাগে শিশুকে নিয়ে ট্রেনে উঠলেন মহিলা! তুলকালাম কাণ্ড স্টেশন চত্বরে

উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল: বুধবার সকালে হুলুস্থুল কাণ্ড স্টেশন চত্বরে। চলন্ত ট্রেন থেকে উদ্ধার হল ব্যাগবন্দি…

60 mins ago

This website uses cookies.